বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাত আটটা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৬টি জেলায় ১৪ পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, আন্দোলকারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৬৫ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে ২ জন, রংপুরে ৪ জন, ফেনীতে ৫ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ২ জন, সিলেটে ২ জন, বরিশালে ১ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯ জন এবং জয়পুরহাটে ১ জন, ঢাকায় ১ জন, কুমিল্লায় ২ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন নিহত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ নিহত ১৯:
সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রবিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক হাজার মানুষ দুপুরের দিকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করে।
রায়গঞ্জে আ.লীগ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকসহ নিহত ৬
এদিকে, জেলার রায়গঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস এবং সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরকার নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, এই উপজেলার ধর্মগাছা উইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার লিটন, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান।
লক্ষ্মীপুরে নিহত ৮
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১ থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সাব্বির, মিরাজ ও কাওসার, আফনান পাটওয়ারী, হারুন মেম্বার, রিয়াজ পাটওয়ারী, আহমেদ শরীফ। অপর একজনের নাম জানা যায়নি।
এদের মধ্যে আফনান পাটওয়ারী নামে আন্দোলনকারী এক ছাত্র আহত হলে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
এদিকে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ অনেককেই জেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: রবিবার দুপুরে ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সিদ্দিক ঢাকার হাবীবুল্লাহ্ বাহার কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
নরসিংদীতে আ.লীগের ৬ জনকে কুপিয়ে হত্যা
নরসিংদী শহরে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরের দিকে শহরের মাধবদী পৌরসভা সংলগ্ন বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এ কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান।
তারা হলেন- সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন ভুঁইয়া, সদর উপজেলার চরদীঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগকর্মী জলিল, সজীব ও মোক্তার।
ফেনীতে নিহত ৫ : আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার দুপুরে শহরের মহিপালে দফায় দফায় চলা এই সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন— ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ (২০), সাইদুল ইসলাম (২১) ও শিহাবউদ্দিন (১৯)।
ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচজনের মরদেহ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মুন্সীগঞ্জে গুলিতে নিহত ২: রবিবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত শহরের থানারপুল এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও ২০-২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে শহরের থানারপুল এলাকায় অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এসময় সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। বেশ কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করা হয়। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
এরপরই আন্দোলনকারীরা সেখানে পাল্টা হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলমান থাকে। এসময় আন্দোলনকারীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মো. আবু হেনা জামাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দু’জন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২-২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামকে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কিশোরগঞ্জে নিহত ৪: কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম অঞ্জনা (৩৫)। তার বাড়ি সদর উপজেলায় যশোদল এলাকায়।
মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন।
বগুড়ায় নিহত ২: রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের দুপচাঁচিয়া উপজেলার সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ২ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। মুনিরুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের দুপচাঁচিয়া উপজেলার সামনে সকাল ১০টার দিকে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। সেখানেই আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। এ সময় উত্তেজিত জনতা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলা করেন। পরে সেখানে থাকা একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়। উপজেলা ভূমি অফিসসহ একাধিক সরকারি স্থাপনায়ও হামলা করা হয়। এ সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ থানার মধ্যে অবস্থান নেন। তখন আন্দোলনকারীরা থানার গেট ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে থানার মধ্যে থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এ সময় ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে মুনিরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান।
একজনের মারা যাওয়া খবর নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. শামসুন্নাহার। মুনিরুলের মাথায় গুলি লেগেছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সংঘর্ষে আহত একজকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে আসার পর মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শজিমেক হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ। তবে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন কি না, তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি ওয়াদুদ।
রংপুরে আ.লীগ নেতাসহ নিহত ৪: রবিবার রংপুর সিটি বাজারের সামনে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন চন্দ্র রায়,
যুবলীগ কর্মী মাসুম ও খায়রুল। অপরজনের নাম জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী।
পাবনায় গুলিতে ৩ জন নিহত: রবিবার দুপুরে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে এ সংঘর্ষে গুলিতে তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারার মধ্য দিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পেছন থেকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক অতর্কিত গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী জাহিদু ইসলাম (১৯), মাহবুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা আব্দুল হামিদ সড়কে অবস্থান করছে।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে কিছু সময়ের জন্য বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিল। এ সময় পেছন থেকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক হামলা চালায়। তবে পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাগুরায় ছাত্রদলনেতাসহ নিহত ৪: রবিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে এক ছাত্রদল নেতা গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।
রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম।
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে মহম্মদপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের অফিসসহ সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল একজনকে কুপিয়ে হত্যা: রবিবার দুপুরে নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় সংঘর্ষের সময় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার নাম টুটুল।জানা গেছে, সংঘর্ষের মধ্যে টুটুল আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাকে ধরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেন আন্দোলনকারীরা। পরে শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং দুদক অফিসসহ এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় ভাঙচুর চালান।
জয়পুরহাটে একজনের মৃত্যু: শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি ও অসহযোগ আন্দোলনে রণক্ষেত্র হয়েছে জয়পুরহাট শহর। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী। জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. সামসুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিলেটে নিহত ২: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গুলিতে দু'জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। রবিবার বেলা ২টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন- ধারাবাহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ।
হবিগঞ্জে: হবিগঞ্জ শহরে সংঘর্ষে রিপন শীল (২৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের ছেলে। হামলা ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও অন্তত শতাধিক।
রবিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা সদরের টাউন হল রোডে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে রিপন শীল নিহত হন।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মুমিন উদ্দিন রিপন শীলের মত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খানের বাড়ি ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
সেসময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সাবেক এমপি মজিদ খানের বাসায় আগুন দেয়। একই সঙ্গে পাশের আরও পাঁচটি দোকানে আগুন দেয়।