ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার প্রায় সবারই পছন্দের। এসব খাবার মুখরোচক হওয়ায় ছোট থেকে বড়, সবার আগ্রহও থাকে বেশি। এ জন্য প্রতিদিনই কোনো এক বেলায় কিংবা বাসা-বাড়ির বাইরে একবার হলেও এ ধরনের খাবার খাওয়া হয়। কিন্তু পছন্দের এ খাবার খাওয়া নিয়েই আবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
এমন অনেকেই আছেন যারা বলে থাকেন, নিয়মিত ঝাল ও মসলাদার খাবার খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এমনকি আলসারের মতো অসুখও হয়ে থাকে। ফলে খাদ্যপ্রেমিকরা ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আসলেই কি ঝাল ও মসলাদার খাবার পেটে আলসার তৈরির কারণ? সম্প্রতি এ ব্যাপারে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট মেডিসিন চিকিৎসক ডা. আশিস মিত্র। এবার তাহলে এ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
স্টমাক আলসার কী: পাকস্থলী বা ডিওডিনামের ভেতরের লাইনিং অনেক সময় ক্ষয় হয়। পরবর্তীতে সেই অংশে ঘা হয়। এই সমস্যাকেই স্টমাক আলসার বলা হয়। কেউ একবার এই ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হলে খাবার খাওয়ার পর পেট জ্বালা-পোড়া বা ব্যথা হয় তার। দীর্ঘসময় পেট ভার হয়েও থাকে। এ জন্য এই ধরনের সমস্যা থাকলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার থেকে কী আলসার হয়: অধিক পরিমাণে ঝাল ও মসলাদার খাবার খাওয়ার ফলে স্টমাক আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জাতীয় খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে দীর্ঘদিন যদি পাকস্থলীত অধিক পরিমাণে অ্যাসিড হয়, তাহলে ছোট ছোট ক্ষত হতে পারে। এ সমস্যাকেই বলা হয় স্টমাক আলসার। এ জন্য ঝাল ও মসলাজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া হ্যালিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও আলসার হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয়: রোগীর লক্ষণ দেখেই অসুখ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিআই এন্ডোস্কোপি টেস্ট এবং বায়োপসি দেয়া হয়। ফলে রোগটা প্রকাশ্যে আসে। এমনকি আলসারের পেছনে এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া থাকলে সেটিও জানা যায়। তারপর সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এ জন্য স্টমাক আলসারের লক্ষণ মনে হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলা হয়।
চিকিৎসা: অ্যাসিডজনিত কারণে আলসার হলে অ্যান্ডাসিডজাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় রোগীকে। কিন্তু এতে যদি উপকার না পাওয়া যায়, তাহলে প্রথমেই টেস্টের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার উপস্তিতি সম্পর্কে জানা যায়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করতে হয়। এতে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন রোগী।
রোগপ্রতিরোধ: এ ধরনের অসুখে ঝাল, মসলাদার খাবার খাওয়া যাবে না। বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান করা যাবে না। বাসা-বাড়িতে তৈরি হালকা খাবার খেতে হবে এবং খাদ্যতালিকায় অবশ্যই শাক-সবজি ও ফল রাখতে হবে।