ঐতিহাসিক মিত্রদের সঙ্গে যেন যেচে দুরত্ব বাড়ানোর মিশনে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নিয়েই প্রতিবেশী কানাডা-মেক্সিকোর সঙ্গে যেমন শুরু করেছেন শুল্ক যুদ্ধ তেমনি গ্রিনল্যান্ড, পানামা খাল কিনতে চেয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ডেনমার্ক-পানামার সঙ্গে।
ট্রাম্পের পাগলামি থেকে বাদ যাননি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গুঞ্জন উঠেছে ট্রাম্পের শপথ আয়োজনে নিমন্ত্রণ পেতে বেশ কয়েকবার তদবির করেও ব্যর্থ হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বরং তার বদলে আমন্ত্রণ পান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ না জানানোই প্রমাণ করছে- উপমহাদেশীয় পরাশক্তি ভারতকেও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না ট্রাম্প। সেই সঙ্গে শপথ নিয়েই অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে সে ধারণাকেই আরও শক্তিশালী করলেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের এমন দূরত্বকে হাতিয়ার করেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্পকে ভারতঘেঁষা করতে না পারার দায় নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকারের। বিজেপি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাতেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতকে নত হতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশে ৩ ফেব্রুয়ারি লোকসভার অধিবেশনে বসেন দেশটির রাজনৈতিক নেতারা। এমন সময় বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরকে দিয়ে তদবির চালান মোদী।
কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পের স্বার্থরক্ষার চেষ্টাকারী ও প্রতিশ্রুতি জানানো বিশ্বনেতারাই সে আয়োজনে নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। ফলে জয়শঙ্করকে তিন-চারবার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েও ট্রাম্পের আস্থা অর্জন করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী।
রাহুল গান্ধীর এমন অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠে লোকসভা। তবুও তিনি ক্ষান্ত হননি। দাবি করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে কখনওই ট্রাম্পকে তোষামোদ করতে গিয়ে ভারতীয়দের ছোট করতেন না তিনি। বরং ভারতকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতেন যেখানে আমন্ত্রিত বিশ্বনেতাদের মতোই সসম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিমন্ত্রণ জানাতে বাধ্য হতেন ট্রাম্প।
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমরা কখনওই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৩-৪ বার পাঠিয়ে বলতাম না, দয়া করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। যদি আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা থাকত এবং এসব প্রযুক্তি নিয়ে আমরা কাজ করতাম তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাদের এখানে আসতেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে বাধ্য থাকতেন।’
রাহুল গান্ধী এমন মন্তব্যে বেশ ক্ষিপ্ত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু। রাহুল গান্ধীকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আপনি এমন ভিত্তিহীন কথা বলবেন না।’ তার দাবি, ট্রাম্পের শপথে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েই যুক্তরাষ্ট্র যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সে সময় ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও কর্মকর্তার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। অংশ নেন ট্রাম্পের শপথ আয়োজনেও।
সে অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কারণেই রাহুল গান্ধী এমন ভিত্তিহীন মন্তব্যের সুযোগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন রিজ্জু। এদিকে, সামাজিক মাধ্যম এক্স পোস্টে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। তিনি জানান, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী কখনওই এ ধরনের শপথ অনুষ্ঠানে যান না। সাধারণত এসব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দূতরাই অংশ নেন। রাহুল গান্ধী মিথ্যাচার করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গেল ডিসেম্বরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর নিমন্ত্রণ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
টিএ/