দীর্ঘ আট বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেলেন স্থানীয় জেলেরা। একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, যা এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এ সিদ্ধান্তে খুশি দীর্ঘ সময় ধরে এই নদী থেকে মাছ আহরণ করতে না পারা জেলেরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে জেলেরা মাছ ধরা শুরু করতে পারবেন।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকার করতে খুলে দেয়া হয়েছে। আপাততে তিন মাসের জন্য নাফ নদীতে মাছ ধরতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরও চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, হাইকোর্ট টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালুর জন্য জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়। মাদকের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ ছিল।
আট বছর পর নাফ নদীতে জেলেদের নামার অনুমতি দেয়া হলেও তাতে কয়েকটি শর্তও দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানায় অভ্যন্তরে নাফ নদীতে শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবে। জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির পাঁচটি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাবে এবং মাছ ধরা শেষে ফেরত আসার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশি করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। কোনো জেলে চেকপোস্টে না জানিয়ে মাছ ধরতে পারবে না।
কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না। মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমে নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদীতে মাছ ধরতে না পারে। এ অনুমোদন সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
প্রায় ৮ বছর পর নাফনদীতে মাছ আহরণের সুযোগ পেয়ে মহাখুশি জেলে সম্প্রদায়। এনিয়ে জেলেদের ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ উৎসব। জেলে শফিক আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন পর মাছ শিকার করতে পারব বলে অসাধারণ ভাল লাগছে। আমার মতো আরও শতশত জেলেদের ঘরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। দীর্ঘদিন পর আমাদের মাছ ধরার সুযোগ তৈরি করে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পত্রটি হাতে পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে নাফ নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ৯ মাস পরে জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারবেন।