দেশের শিক্ষা পরিদর্শকদের নজরদারি করতে রাষ্ট্রীয় দুটি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)-এর একটি টিম পরিদর্শকদেরও নজরদারি করবে। সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক-দুর্নীতি, নিয়োগে অনিয়ম এবং জাল সনদ ধরা নিয়ে কাজ করে ডিআইএ। অতীতে 'মিনিস্ট্রি অডিটের' নামে ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শকরা মোটা খামের (অর্থ) বিনিময়ে জাল সনদ ও অনিয়ম না ধরে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষে প্রতিবেদন জমা দিতো। সেই খাম (অর্থ) বন্ধ করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দপ্তরটি।
৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ধরার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ডিআইএ-তে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক থেকে শুরু করে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক পর্যন্ত প্রায় সবাইকে সরিয়ে নতুন টিম আনা হয়েছে। তাদের দিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে পাঠানো হবে। পরিদর্শনের গিয়ে যাতে ইন্সপেক্টররা আর্থিক কোনো সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য তারা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) নজরদারিতে থাকবেন।
দায়িত্বশীল সূত্রমতে, ডিআাইএ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ১৬টি টিম করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনের টিম গঠন করা হচ্ছে। টিমগুলো যেসব জেলা বা উপজেলায় যাবেন সেখানের এনএসআই ও ডিজিএফআই-কে অফিসিয়াল চিঠি দেবে ডিআইএ। মাঠে যাওয়ার পর নজরদারি করার জন্য যা করণীয় সেই অনুমতি দুটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হবে। এছাড়া ডিআইএ নিজস্ব একটি মনিটরিং টিম, এলাকা ভিত্তিক নিজস্ব সোসিংয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে পরিচালককে জানাবে। এতে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে মোটা খাম নেওয়ার বদনাম থামানো যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে মোটা খাম নিয়ে আসার রীতি বন্ধ করতে চাই। এজন্য অডিট ও ইন্সপেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফর্ম কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ডিআইএ নিজস্ব পদ্ধতিতে টিমগুলো মনিটরিং করা ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেমের সহযোগিতা নেওয়া হবে। কেউ টাকা দিলে এই শ্রেণির মানুষজন জানবে বলে মনে করেন তিনি। তবে ডিআইএ এমন উদ্যোগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কিছুক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়া-দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আগে এক বা দুই জায়গা ম্যানেজ করতে হত, এখন আরও অনেককে ম্যানেজ করতে হবে এমন দাবি করে ঘুষের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।