‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান। এমনই এক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত। কুষ্টিয়ার বিএনপি কর্মী সুজন মালিথা আলোচিত হত্যা মামলারও প্রধান আসামি পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাতকে এবার করা হলো সাময়িক বরখাস্ত।
১৪ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে কুষ্টিয়া সদর থানার মামলায় গত ২৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৩৯ এর ২ নং ধারার বিধান মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার ছিলেন। আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সুজন মালিথা নিহত হন। এর আগে সুজনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ এনে ওই ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা হয়। এতে আসামি হিসেবে মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মালিথার ছেলে সুজন মালিথা ছিলেন বিএনপির কর্মী।আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে দলের কাজ করতেন। এতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের যোগসাজশ এবং উস্কানিতে সুজন মালিথাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তারই জেরে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা সবাই মিলে সুজন মালিথার বাসায় ঢোকে এবং তাকে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়।
পরদিন সকালে সুজনের পরিবার জানতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জেরে উল্লিখিত আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে সুজন মালিথাকে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। পরে বাদীসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে স্বজনদেরই তাড়িয়ে দেয়।