শাড়ি নিয়ে যাদের চর্চা, প্রেম, তাদের সংগ্রহে কাঞ্জিভরম চিনবেন না, তেমন সম্ভবত হয় না। এ শাড়ির কথা বললেই ছবি ভেসে ওঠে সিল্কের মিহি বুননের, ঢালা পাড়ের সোনালি কাজ করা উজ্জ্বল বস্ত্রখণ্ডের। ১২ হাতের শাড়ি যেন নিজেই একটি শিল্প। বিয়ের কনে হোন বা কনের মা কিংবা মাসি—উৎসব-অনুষ্ঠানে কাঞ্জিভরমের রোশনাই আলাদা মাত্রা দেয়।
তবে শাড়ির জগতে আরও এক নাম কাঞ্চিপুরম। কাঞ্জিভরম বা কাঞ্চিপুরম— শাড়ি হিসেবে কোনটির কদর বেশি, কোন তফাত রয়েছে দুইয়ের মধ্যে?
শাড়ির উৎস সন্ধানে
কাঞ্জিভরম, কাঞ্চিপুরম— দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় শাড়ি। তবে তা নিছক বস্ত্রখণ্ড নয়, শিল্প-সংস্কৃতি ভাবনার সমাহার। তামিলনাড়ুর বহু পুরনো জনপদ কাঞ্চিপুরম। কয়েক শতক ধরে সেখানেই তৈরি হয় উৎকৃষ্টমানের সিল্কের শাড়ি। সেই জায়গার নাম থেকেই নাম কাঞ্চিপুরম। কাঞ্জিভরমের জন্মস্থানও কাঞ্চিপুরম। নামে আলাদা হলেও দুই শাড়ি আসলে এক। শাড়িতে ব্যবহৃত তন্তুর নামকরণ এক একজায়গায় একরকম। তা থেকেই ভিন্ন নাম।
কেউ কেউ বলেন, কাঞ্চিপুরমের বয়নশিল্প কয়েকশো নয়, হাজার বছরের পুরনো। চোল রাজাদের রাজত্বকালে এমন শাড়ি তৈরি হত। কাঞ্চিপুরমের খ্যাতি এখানকার প্রাচীন মন্দিরের পাশাপাশি বয়নশিল্পের জন্যও।
কাঞ্জিভরম-তারকা কথা
দক্ষিণ ভারতীয় বিবাহ অনুষ্ঠানে কাঞ্জিভরম পরার রীতি রয়েছে। বাংলায় যেমন বিয়ের কনেরা বেনারসি শাড়ি পরেন, তেমনই তামিলনাড়ুর পছন্দের শাড়ির তালিকায় থাকে কাঞ্জিভরম। ভাল মানের শাড়ি স্থায়িত্বও তেমনই। দক্ষিণের এই রাজ্যের অনেক পরিবারেই এই শাড়ি বংশপরম্পরায় পারিবারিক ঐতিহ্য এবং সম্পদ হয়ে ওঠে।
ভারতীয় অভিনেত্রী রেখা থেকে আম্বানী পরিবারের বধূ নীতা আম্বানী— উৎসব, অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই কাঞ্জিভরম পরেন। রেখার মতো এই শাড়ির অনুরাগী দু’জন খুঁজে পাওয়া কঠিন। সোনালি থেকে কমলা— ঢালা জরির কাজ করা উজ্জ্বল শাড়ি পরে ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকে পেশাজগতে বার বার ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন অভিনেত্রী। জাহ্নবী কপূর থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, বিদ্যা বালানকে একাধিক বার দেখা গিয়েছে কাঞ্জিভরমে। আমাদের দেশেও এখন কাঞ্জিভরম ও কাঞ্চিপুরম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হালফ্যাশনের শাড়ি যতই থাক, প্রাচীন কাঞ্জিভরম বা কাঞ্চিপুরমের আবেদন সময়কে হার মানায়।
কিভাবে চিনবেন আসল কোনটি
আসল কাঞ্জিভরম সিল্কের রং উজ্জ্বল হয়। কাঞ্জিভরম শা়ড়ি কেনার সময় দেখে নিন, জরিতে লাল সুতো রয়েছে কি না। যদি না থাকে তা হলে বুঝতে হবে, শাড়িটি আসল কাঞ্জিভরম নয়। শাড়ির উল্টো পিঠে জরির সুতোর গিঁট থাকলে, তা আসল কাঞ্জিভরমের লক্ষণ।
কাঞ্জিভরমের পাড় চওড়া হয়। সুতোর মধ্যে একটা ডুয়েল টোনও থাকে। শাড়ির আঁচলের কোনা থেকে বেশ কয়েক গোছা সুতো টেনে বার করে নিন। সেগুলি একত্র করে তার এক প্রান্ত আগুনের শিখার উপর ধরুন। যদি পোড়া চুলের মতো গন্ধ বেরোয় তা হলে বুঝবেন, সিল্কটি আসল। যদি কৃত্রিম কিছু মেশানো থাকে, তা হলে গন্ধ হবে প্লাস্টিক পোড়ার মতো।
শাড়ি হাতে ধরে বুঝতে হবে। আসল কাঞ্জিভরম শাড়ি তৈরি করা হয় মালবেরি সিল্ক দিয়ে। কিছু ক্ষণ হাতে ঘষলেই তার মসৃণ, কোমল ভাব অনুভব করা যায়। কৃত্রিম সিল্ক হলে হাতে ধরে তফাত বুঝতে পারবেন সহজেই। এছাড়াও কাঞ্জিভরম শাড়ি বহরে বড়, ১৪ হাত হয়। এই বিষয়টিও দেখে নেবেন। যদ শাড়ির দাম ৫ হাজারের নীচে হয় তাহলে তা আদৌ কাঞ্জিভরম নয়।