কোনো রকম বিদেশি সহায়তা ছাড়াই প্রথমবারের মতো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল খনন করছে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে বছরে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি সক্ষমতা অর্জন হবে দেশের। এ ড্রেজিংয়ের ফলে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের নাব্য বাড়ায় জাহাজ চলাচল নিরাপদ হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১৩ মিটার ড্রাফটের কয়লাবাহী জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। গভীর এ সমুদ্রবন্দরে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেলে নির্মাণ করে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় পাওয়ার জেনারেশন কোম্পনি বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে নির্মাণের দুই বছরের মধ্যে চ্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় পলি জমতে শুরু করে। কোথাও কোথাও পানির গভীরতা নেমে এসেছে ১০ মিটারে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলটি রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ড্রেজার খনক দিয়ে শুরু করেছে খনন কাজ। গতমাসে প্রথম দফায় ড্রেজিং করা হয়। খনক এতো দিন কর্ণফুলী ড্রেজিং করলেও এবারই প্রথমবারের মতো গভীর কোন সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল ড্রেজিং করছে। এতে করে বছরে কমপক্ষে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন করছে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ বলেন, গত এক বছরে আমরা বেশ কয়েকটি সার্ভে করে দেখতে পেয়েছি, এখানে নাব্য অনেক কমে গেছে। যেসব জায়গায় বেশি কমে গেছে সেগুলোকে টার্গেট করে আমরা জাহাজ নিযুক্ত করেছি।
ড্রেজিংয়ে নানা চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে খনককে। বিশেষ করে ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেলটি এখনও স্থিতিশীল না হওয়ায় পলি জমছে। সেইসঙ্গে সাগর থেকে জোয়ার ও জাহাজের সঙ্গে আসা পলিও বের হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় নাব্য কমেছে চ্যানেলে। তবে এসব মোকাবেলা করে ড্রেজিং করছে বন্দরের একমাত্র খননকারী জাহাজটি। এছাড়া টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করা ড্রেজারগুলো থেকে খনকের সক্ষমতা বেশি হওয়ায় সফলতাও বেশি হবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের খনক অধিনায়ক লে. কমান্ডার এম আশিক মাহমুদ বলেন, এখানকার মাটি হলো কাদা মাটি আর কর্ণফুলী চ্যানেলে বেলে মাটি। ওই মাটি সহজে উঠে যায় কিন্তু এখানকার মাটি উঠাতে একটু সময় লাগে। এরকম একটু চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আশা করি, দিন যতো যাবে এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাবো।
২০১৬ সালে মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার গভীরতা এবং ২৫০ মিটার চওড়া এ চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়।