দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা রোধকারী আইন বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে দুই দিন ধরে চলমান বিক্ষোভের কাছে নতি স্বীকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা বজায় রাখতে একটি নতুন বিল পেশ করবেন।
গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ইউক্রেনের পার্লামেন্টে নতুন একটি বিল পাস হয়। বুধবার (২৩ জুলাই) বিলটিতে স্বাক্ষর করেন জেলেনস্কি। আইনটিতে ইউক্রেনের জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো (নাবু) এবং বিশেষায়িত দুর্নীতি দমন প্রসিকিউটর অফিসের (স্যাপ) নিয়ন্ত্রণ প্রসিকিউটর জেনারেলের কাছে হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে।
বিরোধীরা বলছেন, এই আইনের ফলে দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোর ক্ষমতা আরও কমবে। তারা আরও দুর্বল হবে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। ফলে দেশে দুর্নীতি আরও বেড়ে যাবে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই এই আইন পাস করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনেকে একে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য বিপজ্জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন।
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, আইনটির প্রতিবাদে গত মঙ্গলবারই ইউক্রেনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। যা দিনভর চলতে থাকে। বিক্ষোভ দমনে রাতে কারফিউ জারি করা হয়। সেই কারফিউ ভেঙেই চলে বিক্ষোভ। বুধবার বিক্ষোভ আরও বড় আকার ধারণ করে। এদিন লভিভ, দিনিপ্রো ও ওডেসা শহরেও বিক্ষোভ হয়।
বিক্ষোভকারীরা জেলেনস্কির সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক অভিহিত করে পদত্যাগের আহ্বান জানান। তাদের হাতে হাতে ছিল সরকারবিরোধী স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। এক বিক্ষোভকারীর পোস্টারে লেখা ছিল, ‘আমরা স্বৈরশাসন নয়, ইউরোপকে বেছে নিয়েছি’।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বলেন, ‘আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যাতে সামরিক বাহিনীকে আরও অর্থ দেয়া যায়। সরকার যত বেশি কার্যকরভাবে সম্পদের ব্যবহার করবে এবং দুর্নীতি কম হবে, তত বেশি আমরা প্রতিরক্ষা কাজে সম্পদের যোগান পাব।’
আরেকজন বলেন, ‘দুর্নীতি এখনও আমাদের বড় সমস্যা। যুদ্ধের মধ্যেও জিডিপির বড় একটি অংশ গ্রাস করছে দুর্নীতি। প্রেসিডেন্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’ এর মধ্যেই বিতর্কিত আইনটির সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
এমনকি ইউক্রেন সরকারের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে বুধবার সন্ধ্যায় ভাষণ দেন জেলেনস্কি। ভাষণে তিনি দাবি করেন, দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যাবে, তবে তাদের রুশ প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে, যার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল নিশ্চিত করবেন, কেউ যেন আইনের ঊর্ধ্বে না থাকে।
এমআর/এসএন