ইফতারে ঠান্ডা পানি কতটুকু ভালো

সারাদিন রোজা রেখে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই গ্লাসভর্তি ঠান্ডা পানি—সত্যিই যেন স্বর্গীয় অনুভূতি! কিন্তু এই সাময়িক প্রশান্তির পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। গরমে ঘেমে-নেড়ে ক্লান্ত শরীর যখন হিমশীতল পানির সংস্পর্শে আসে, তখন ভেতরে কী ঘটে? হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, পাকস্থলীতে চাপ পড়ে, এমনকি গ্যাস্ট্রিকের প্রকোপও বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে পানিশূন্যতা পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। তাহলে কী করবেন? ঠান্ডা পানির লোভ সামলে কুসুম গরম বা সাধারণ তাপমাত্রার পানি পান করাই হতে পারে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, ইফতার শুধু তৃপ্তির জন্য নয়, সুস্থ থাকার জন্যও!

কেন ঠান্ডা পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে

সারাদিন না খেয়ে থাকার পর পাকস্থলী একপ্রকার বিশ্রামে থাকে। ইফতারে হঠাৎ ঠান্ডা পানি প্রবেশ করলে পাকস্থলীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ব্যাহত হয় এবং হজমপ্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে গ্যাস্ট্রিক, পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যেতে পারে

সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা থাকে। কিন্তু ইফতারে ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যেতে পারে, যার ফলে অন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এতে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে

যারা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ইফতারে ঠান্ডা পানি হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। ঠান্ডা পানি পাকস্থলীতে গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বুকজ্বালা, বদহজম, পেটের চাপ ও ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়তে পারে

রমজানে দীর্ঘ সময় পানাহার বন্ধ থাকার কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। ইফতারে ঠান্ডা পানি পান করলে সাময়িক স্বস্তি পেলেও, এটি শরীরের পানিশূন্যতা কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দিতে পারে। ঠান্ডা পানি পান করলে শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি শোষণ করতে পারে না, ফলে দ্রুত ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে।

শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশির সম্ভাবনা

ঠান্ডা পানি গলার রক্তনালী সংকুচিত করে ফেলে, যা শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক হতে পারে। ঠান্ডা পানি নিয়মিত পান করলে গলা ব্যথা, কাশির সমস্যা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

তাহলে ইফতারে কী পান করবেন?
গরম বা সাধারণ তাপমাত্রার পানি: শরীরকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনতে উষ্ণ বা সাধারণ তাপমাত্রার পানি পান করা ভালো।

লেবু-পানি বা শরবত: পানিশূন্যতা পূরণের জন্য লেবু-পানি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর শরবত পান করা যেতে পারে।

ধীরে ধীরে পানি পান করা: ইফতারের সময় একসঙ্গে বেশি পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে পানি পান করুন। এতে শরীর সহজে অভ্যস্ত হতে পারবে এবং পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমবে।

তাই ইফতারে ঠান্ডা পানির লোভ সামলে, স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ!

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় একদিনে প্রাণ গেল আরও ৭৪ ফিলিস্তিনির Jul 10, 2025
img
শাহরুখকে ছাড়াই হারিয়ে গেল রাকেশ শর্মার বায়োপিক ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’! Jul 10, 2025
img
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পিএসজি Jul 10, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের আভাস Jul 10, 2025
img
চট্টগ্রামে চুরি হওয়া স্বর্ণালংকারসহ ১ জন গ্রেফতার Jul 10, 2025
img
নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে : আমিনুল হক Jul 10, 2025
img
১৩ বছর পর বলিউডে আবারও সম্পর্কের গল্প নিয়ে ফিরছে ককটেল ২! Jul 10, 2025
img
রাজকীয় ঐতিহ্য বয়ে আনা বলিউডের পাঁচ তারকা! Jul 10, 2025
img
১০০ বছরে সাকিব ১-২টা বের হয় : বিসিবি পরিচালক Jul 10, 2025
img
আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে সুখবর পেলেন বাংলাদেশের একাধিক ক্রিকেটার Jul 10, 2025
img
আগামী নির্বাচনে ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ১৬ হাজার: প্রেস সচিব Jul 10, 2025
img
সাত মাসে বাংলাদেশ ৪০ কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ পেয়েছে: রাষ্ট্রদূত Jul 10, 2025
img
বন্যার কারণে ৩ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা স্থগিত Jul 10, 2025
img
শাহ আমানত বিমানবন্দরে তিন যাত্রীর ব্যাগ থেকে ১৫ লাখ টাকার পণ্য জব্দ Jul 10, 2025
img
তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে অভিযান Jul 10, 2025
ডন থ্রিতে ফিরছেন শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা? জল্পনায় উত্তাল বলিউড Jul 10, 2025
বাংলাদেশে পুশইন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের দরজায় মমতা Jul 10, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 10, 2025
সরকারি অর্থায়নে গাড়ি কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা অর্থ মন্ত্রণালয়ের Jul 10, 2025
১০ মিনিটে বাংলাদেশের আলোচিত সব খবর Jul 10, 2025