সেহরিতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

রমজান মাসে পুষ্টিকর সেহরি সারাদিনের রোজার শক্তি জোগায়। তাই সেহরিতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা রোজার সময় অস্বস্তি, পানিশূন্যতা বা শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। জেনে নিন কোন ধরনের খাবার সেহরিতে এড়িয়ে চলা জরুরি।

১. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, আচার বা প্রক্রিয়াজাত মাংস সেহরিতে এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে, যা রোজার সময় পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। লবণ শরীর থেকে পানি শোষণ করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি বের করে দেয়, ফলে সারাদিন তৃষ্ণা অনুভূত হয়। তাই সেহরিতে কম লবণযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন।

২. মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি বা চিনিযুক্ত পানীয় সেহরিতে এড়ানো উচিত। চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তা দ্রুত কমিয়ে ফেলে। এর ফলে রোজার সময় দুর্বলতা, মাথাব্যথা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। সেহরিতে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন ফল বা মধু বেছে নেয়া ভালো, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।

৩. তেলে ভাজা ও ভারী খাবার
তেলে ভাজা খাবার যেমন পেঁয়াজু, বেগুনি, পরোটা বা সমুচা সেহরিতে খাবেন না। এই ধরনের খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এছাড়া, তেলে ভাজা খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা রোজার সময় অস্বস্তি বাড়ায়। সেহরিতে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন ওটস, ডাল, সবজি বা সেদ্ধ ডিম খাওয়া ভালো।

৪. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংকসে থাকা ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয় এবং পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। সেহরিতে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে সারাদিন তৃষ্ণা বেশি লাগে। এছাড়া, ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা রোজার সময় ক্লান্তি বাড়ায়। সেহরিতে পানি, দুধ বা ফলের রস পান করা ভালো।

৫. প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বার্গার, পিৎজা, হট ডগ বা নুডলস সেহরিতে না খাওয়া ভালো। এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ, চিনি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং শরীরে শক্তি কমিয়ে দেয়। এছাড়া, ফাস্ট ফুড খেলে রোজার সময় পেটে গ্যাস বা বদহজমের সমস্যা হতে পারে।

৬. অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
মসলাযুক্ত খাবার যেমন ঝাল মাংস, বিরিয়ানি ইত্যাদি সেহরিতে এড়ানো উচিত। অতিরিক্ত মসলা পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, মসলাযুক্ত খাবার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। সেহরিতে হালকা মসলাযুক্ত ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া ভালো।

৭. দুগ্ধজাত পণ্য
কিছু মানুষের জন্য দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য যেমন পনির, দই বা মাখন হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ধরনের খাবার পেটে গ্যাস বা বদহজমের কারণ হতে পারে। যাদের ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স আছে, তাদের সেহরিতে দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে নারকেল দুধ বা সয়া দুধ বেছে নেয়া যেতে পারে।

৮. অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার
সাদা ভাত, পাস্তা বা সাদা রুটি জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তবে এই শর্করা দ্রুত ভেঙে যায় এবং শক্তি কমিয়ে ফেলে। এর ফলে রোজার সময় দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। সেহরিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন ওটস, বাদামি চাল বা গমের রুটি খাওয়া ভালো, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন: আসছে রমজান, সেহরি-ইফতারে যেভাবে বানাবেন সুস্বাদু হালিম

৯. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার
ঘি, মাখন বা তেল-চর্বিযুক্ত খাবার সেহরিতে এড়ানো উচিত। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সেহরিতে স্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নেয়া ভালো।

১০. কৃত্রিম মিষ্টি ও প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার
কৃত্রিম মিষ্টি বা প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার যেমন কোল্ড ড্রিংকস, জেলি বা প্যাকেটজাত জুস সেহরিতে এড়ানো উচিত। এই ধরনের খাবারে থাকা কেমিক্যাল শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, কৃত্রিম মিষ্টি রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়মিত করে দিতে পারে।

সেহরি খাওয়ার সময় সচেতনভাবে খাবার নির্বাচন করা জরুরি। অতিরিক্ত লবণ, চিনি, তেল বা মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চললে রোজার সময় শারীরিক অস্বস্তি কম হবে এবং সারাদিন শক্তি ও সতেজতা বজায় থাকবে। সেহরিতে পুষ্টিকর, হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মেঘনায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন Dec 26, 2025
img
বলিউড তারকাদের ‘বড়দিন’ উদযাপন কেমন কাটল? Dec 26, 2025
img
‘আজকের বাংলাদেশ পেতে ৪৭ থেকে ২৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে’ Dec 26, 2025
img
তারেক রহমানের নিরাপত্তার স্বার্থে জিয়া উদ্যান ও স্মৃতিসৌধের আশপাশে বিজিবি মোতায়েন Dec 26, 2025
img
কানাডায় গ্ল্যামারাস লুকে নুসরাত! Dec 26, 2025
img
দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর আগে জীবনে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনা Dec 26, 2025
img
আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ রিমুভ, জানালেন কারণ Dec 26, 2025
img
জাতির ওপর থেকে এখনও কালো ছায়া যায়নি: জামায়াত আমির Dec 26, 2025
img
বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই ছেলে ও হৃতিক, ছড়ালেন খুশির ছোঁয়া Dec 26, 2025
img
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে কারাগারে ২ জন Dec 26, 2025
img
২১ দিনে আয়ের রেকর্ড গড়ল ‘ধুরন্ধর’ Dec 26, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের ভোটার পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন ছাড়াল ৪১ হাজার Dec 26, 2025
img
তারেক রহমানের ভোটার হতে আইনি কোন বাধা নেই: ইসি মাছউদ Dec 26, 2025
img
আত্মপ্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দল জাতীয় মুসলিম জোট Dec 26, 2025
img
চমকের ‘চুড়ি ছাম ছাম’ লুকে মুগ্ধ দর্শকমহল! Dec 26, 2025
img
বিরোধী দল ছেড়ে শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন অভিনেত্রী পার্নো মিত্র! Dec 26, 2025
img
বিশ্ববাজারে স্বর্ণ-রুপা ও প্লাটিনামের দামে নতুন রেকর্ড, নেপথ্যে কী? Dec 26, 2025
img
‘আমরা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই, যেখানে অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই’ Dec 26, 2025
img
অসুস্থতার মধ্যেও শেষ শুটিং করেছিলেন ইরফান খান! Dec 26, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন অটোরিকশা চালক Dec 26, 2025