রমজানের ইফতারের ঐতিহ্যবাহী এক আইটেম হলো মুড়িমাখা। একটি বড় পাত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে মুড়ি মিলে তৈরি করা হয় এই মুড়ি মাখা। আর এই মুড়ি মাখায় জিলাপি মেশানো হবে কি না তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় ডাইনিং টেবিল থেকে ফেসবুকের কমেন্ট সেকশন অবধি। তবে মুড়ির সঙ্গে জিলাপির সংমিশ্রণ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত ?
চাল দিয়ে তৈরি খাবারটি এটি বেশ হালকা হওয়ায় সহজেই হজম হয়। এটি বেশ ঝামেলামুক্ত হালকা নাশতা হিসেবে জনপ্রিয়। ইফতারে সাধারণত সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সামান্য লবণ আর ছোলা মিশিয়ে মুড়ি মাখানো হয়। এক্ষেত্রে ওয়াইল্ড কার্ড কী জানেন? একটি জিলাপিকে কয়েক টুকরো করে সেই মুড়ি মাখার মধ্যে ফেলে দেওয়া!
জিলাপি হলো মোঘল আমলের খাবার। যা এই উপমহাদেশে এসেছিল পারস্যের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে, যারা আমাদের মতোই ডুবো তেলে ভাজা মিষ্টান্নপ্রেমী ছিলেন।
ব্যক্তিভেদে রুচির পার্থক্য থাকবেই। এ ছাড়া কারও হজমশক্তি ভালো, কারও ভালো নয়। তবে ছোলা-মুড়িতে জিলাপি মিশিয়ে খাওয়া আদতে কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? জানতে চেয়েছিলাম ফরাজী হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, ‘মুড়িতে ভিটামিন বি এবং প্রচুর খনিজ উপাদান আছে। তাই মুড়ি আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। মুড়িতে আরও মেলে প্রচুর শর্করা। পেট ভরা রাখে বলে ওজন কমাতে সহায়ক, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। আর ছোলা মূলত ডাল, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। ছোলা ও মুড়ি আলাদা আলাদা বা একসঙ্গে খেলে বেশ উপকার; কিন্তু ছোলা–মুড়ির সঙ্গে জিলাপি ও বিভিন্ন রকমের তেলে ভাজা চপ মেশানো খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। মুখরোচক হলেও ঝাল খাবারের সঙ্গে মিষ্টি জিলাপি খেলে অ্যাসিডিটিসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।’
আগে থেকেই যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্থূলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের খাবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট একত্রে গ্রহণ করলে তা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একইসঙ্গে, বেশি পরিমাণে তেল ও চিনিযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।
কারও যদি শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পরিমিত পরিমাণে (যেমন সপ্তাহে এক-দুবার) মুড়ির সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এটি যেন পরিমাণে সীমিত থাকে এবং অতিরিক্ত তেল ও চিনি গ্রহণ এড়ানো হয়। এর থেকে ভালো বিকল্প হতে পারে মুড়ির সঙ্গে দই, ফল বা বাদাম মিশিয়ে খাওয়া, যা একইসঙ্গে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
টিএ/