গোপন সমঝোতায় হাটবাজার ইজারা নিলেন বিএনপি নেতারা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাটবাজার ইজারার কার্যক্রম গোপন সমঝোতা ও ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় কম দামে ইজারা দেওয়া হয়েছে কয়েকটি বাজার, যা নিয়মবহির্ভূত। ফলে কাগজে সবকিছু সঠিক থাকলেও, কৌশলে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে কমলনগর ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন ২১টি হাটবাজার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল।

গত বুধবার ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। প্রতিটি বাজারের আট থেকে ১০টি করে দরপত্র ফরম বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৩টি ও দুটি করে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলো ছিল অসম্পূর্ণ তথ্যসংবলিত। আবার কোনো বাজারে পড়েছে মাত্র একটি দরপত্র।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, দরপত্র ক্রয় করা ব্যক্তিদের নিয়ে গোপনে সমঝোতার ফন্দি আঁটেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তাই তাদের পছন্দের ব্যক্তিরাই পেয়েছেন প্রতিটি বাজারের ইজারা।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৩টায় দরপত্র বক্স খোলে উপজেলা প্রশাসন। এতে দেখা যায়, হাটবাজার ইজারার ১ নম্বর তালিকায় থাকা চরকালিকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট বাজারটি ২ লাখ ৯২ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মেহেদি হাসান লিটন পেয়েছেন, যা গত বছরের ইজারা মূল্যের চেয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা কম।

একই অবস্থা চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজারের। দরপত্র ক্রয় করা সবাইকে ম্যানেজ করে ওই বাজারের ইজারা বাগিয়ে নেন বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম শওকত, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ টাকা কম। একই ইউনিয়নের চরবসু বাজারটি গত বছরের চেয়ে ৫০ হাজার টাকা কমে ২ লাখ ৯ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় জামায়াত নেতা আবদুস সালাম।

এ ছাড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার তোরাবগঞ্জ বাজারটি সবাইকে ম্যানেজ করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ১৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. গোলাম কাদের। একইভাবে উপজেলার হাজিরহাট বাজারটি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় ইজারা নিলেন বিএনপির উপজেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল।

চরমার্টিন ইউনিয়নের মুন্সীগঞ্জ বাজারের দরপত্র ছয়জনে কিনলেও দরপত্র পড়েছে শুধু যুবদল নেতা তারেক রহমান রকির। তিনি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ২০০ টাকা বাড়তি দরে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ টাকায় বাজারটি ইজারা নিয়েছেন। ওই ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারটিও বিএনপি নেতা নুরনুবী মামুন দরপত্র নেওয়া অন্তত ১০ জনকে ম্যানেজ করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ৫শ টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নেন। এভাবে ২১টি বাজারের মধ্যে দু-একটি বাজার জামায়াত নেতারা নিলেও বাকি বাজারগুলো কৌশলে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বাগিয়ে নেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

তোরাবগঞ্জ বাজার ইজারার দরপত্র কেনা মো. মনতাজ হোসেন বলেন, আমরা কয়েকজনে দরপত্র কিনেছি। পরে বিএনপির উপজেলা সভাপতি গোলাম কাদের আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করে তোরাবগঞ্জ বাজার ইজারা নিয়েছেন।

তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ফাযিল মিয়ার হাটের জন্য দরপত্র নেওয়া মো. ইউসুফ খান বলেন, বাজার ইজারার জন্য আমিসহ চারজন দরপত্র নিয়েছি। পরে আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিএনপি নেতা মো. আবদুস শহিদ বাজারটি ইজারা নিয়েছেন।

চরমার্টিন ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারের ইজারা নেওয়া বিএনপি নেতা মামুন সমঝোতার কথা স্বীকার করে বলেন, আট থেকে ১০ জনে বাজারটির দরপত্র নিয়েছিল। পরে সবার সঙ্গে সমঝোতা করে বাজারের ইজারা নিয়েছি। নিজের জন্য নয়; বরং এই খাতের টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়ন করা হবে।

তোরাবগঞ্জ বাজারের ইজারা পাওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. গোলাম কাদের বলছেন, কোনো গোপন বৈঠক বা সমঝোতা হয়নি। নিয়ম মতেই ইজারা নিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, গত তিন বছরের বাজার দরের গড় হার এবং ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে বাজারের কাঙ্ক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত মূল্যের নিচে নেওয়ার সুযোগ নেই। পছন্দের লোকজন বাজার পাওয়ার জন্য বিএনপির সমঝোতার বিষয়ে আমি অবগত নই। বাজারের মূল্য যত বেশি হবে সরকার রাজস্ব তত বেশি পাবে।


এমআর

Share this news on: