বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবিতে টানা কর্মবিরতি ও অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। এতে পাটকলগুলোতে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার টানা ষষ্ঠ দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছেন পাটকল শ্রমিকরা। কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি শ্রমিকরা বিকালে খুলনা ও যশোরের তিনটি পয়েন্টে অবরোধ পালন করবে। ৪র্থ দিনের মত শ্রমিকরা সড়কেই ইফতার ও নামাজ আদায় করবে।
বিজেএমসি ও সংশ্লিষ্ট মিল সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আলিম জুট মিল, ক্রিসেন্ট জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, স্টার জুট মিল, কার্পেন্টিং জুট মিল, জেজেআই। ৯টি পাটকলে ১ হাজার ১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে ৪১৪ জন কর্মকর্তা ও ৭৭৩ জন কর্মচারী রয়েছে। তাদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এদিকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের মূল বাজার সুদান, ঘানা, সিরিয়া, ইরান ও ভারত। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে এ সব দেশে পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ফলে মিলগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে।
আলিম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান (জিএম) মো.খলিলুর রহমান বলেন, বিগত চার মাস ধরে মিলের ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পাচ্ছে না। আরও একটি মাস শুরু হয়েছে, এখনও বেতন পাইনি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন,শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছে। রুটি-রুজির দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের পেটে ভাত নেই। প্রথম রোজা থেকেই নতুন রাস্তা মোড়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যে যা দেয় তা আর পানি খেয়ে ইফতার করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন জানান, প্রতিদিনের মতো শনিবার বিকেল ৪টা থেকে খুলনার খালিশপুর ও দিঘলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৫টি পাটকল শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়, আটরা শিল্পাঞ্চলের ২টি পাটকলের শ্রমিকরা আলিম জুট মিলের সামনে ও নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের ২টি মিলের শ্রমিকরা রাজঘাটে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা-যশোর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, পাটকল শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে। এতে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে প্রতিদিন গড়ে ৯০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই হিসেবে ৬ দিনে ৫৪০ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৩ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৯ কোটি টাকার মজুরি ও বেতন বকেয়া রয়েছে।
টাইমস/এইচইউ