নওগাঁর নারীদের টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে, আসছে কোটি কোটি টাকা

রপ্তানিযোগ্য টুপি তৈরিকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ছে। অবসর সময়ে টুপি তৈরি করে অন্তত ৪০ হাজার নারীর সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। দেশীয় তৈরি এসব টুপি রপ্তানি হচ্ছে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। যেখান থেকে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে ওমান, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতে বাংলাদেশি এসব টুপি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এসব দেশ থেকে আসা বিপুল চাহিদার কারণে নওগাঁর শত শত নারী এখন টুপি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারীদের তৈরি টুপি শুধু তাদের জীবনমানই উন্নত করছে না, বরং বাংলাদেশকেও বিশ্ববাজারে একটি নতুন পরিচয় এনে দিচ্ছে।

সরেজমিনে নওগাঁর বর্ষাইল, হাপানিয়া, কীর্তিপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ নারীরা একসঙ্গে বসে গল্পগুজবের পাশাপাশি করছেন টুপি সেলাইয়ের কাজ। তৈরি হচ্ছে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটি দানা ও মাছ কাটা। নারীদের পাশাপাশি অনেক স্কুল শিক্ষার্থীও এখন এই শিল্পে যুক্ত হয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে। সামনে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। তবে টুপি তৈরির পারিশ্রমিক নিয়ে রয়েছে কারিগরদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। জানিয়েছেন সরকারি প্রশিক্ষণেরও কথা।

নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নারী কারিগর নার্গিস বেগম বলেন, দানা এবং মাছ কাটা টুপির কাজ করি। একেকটা দানা টুপি তৈরি করতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। প্রতিটি টুপির জন্য ২০০০-২৫০০ টাকা করে পাই। গুটি দানা এবং মাছ কাটা টুপি তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম হিসেবে মজুরি অনেকটাই কম। মজুরি আরেকটু বেশি পেলে আমাদের ভালো হতো।
একই গ্রামের আরেক নারী কারিগর লিপি খাতুন বলেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি টুপি সেলাইয়ের কাজ করি। টুপি সেলাই করে বাড়তি একটা আয় হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের সখ পূরণ করতে পারছি পাশাপাশি সংসারেও কিছুটা সহযোগিতা করতে পারছি। সরকার থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পেলে কাজের মান আরও ভালো হবে।

বিদেশি এসব টুপি তৈরির উদ্যোক্তো জীবন আহমেদ সুজন বলেন, ১০-১৫ বছর আগে স্বল্প পরিসরে এসব টুপি তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় জেলার ৫-৬ হাজার নারী আমার অধীনে টুপি তৈরির কাজ করেন। টুপি তৈরি হলে টুপিগুলোকে ওমানে রপ্তানি করে থাকি। আমার তৈরি এসব টুপি ওমান থেকে বিভিন্ন দেশে যায়। সেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এখন স্বাবলম্বী। সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারতাম। এতে আরও বিপুল সংখ্যক নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তবে টুপির বিষয়ে এখনো কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। উদ্যোক্তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদেরকে নিয়ে বিসিক থেকে টুপি তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়াও বিসিক থেকে স্বল্প সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। নারী উদ্যোক্তা হলে ৫ শতাংশ এবং পুরুষ উদ্যোক্তা হলে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। পণ্য বিপণনে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা বিসিক থেকে করা হয়ে থাকে।

আরএ/এসএন

Share this news on: