কিছু ‘কুতুব’ দেশ কোথায় নিতে চান, জানি না: ফখরুল

"যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে নির্বাচনের ক্যাম্পিং করতে যান, তারা কী করবেন, সেটা আমরা ভালো বুঝি।" সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কিছু কুতুব আবির্ভূত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, "আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু নতুন নতুন, আমি বলি, ‘কুতুব’ আবির্ভূত হয়েছে, তারা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, জানি না।"

তিনি আরও বলেন, "তাদের ভাষা, তাদের বাক্য, তাদের কথা, তাদের বক্তব্য— সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকে এক নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চায় না।"

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজ আমাদের সজাগ থাকতে হবে; সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বিএনপি একমাত্র দল, যারা প্রতিবার, প্রতিটি বিপদ-আপদে রুখে দাঁড়িয়েছে, তারা সবসময় রক্ষা করেছে বিপদ থেকে। বিএনপি সেই দল, যারা বাংলাদেশকে সমস্ত সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।”

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি এ সভা আয়োজন করে।

সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার অভিযোগ তোলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের গণতন্ত্রে যেতে হবে; সেইটা হচ্ছে ‘এ টু জেড’ ডেমোক্রেসি। এই ডেমোক্রেসি ছাড়া আমরা মনে করি না যে আর কোনো ব্যবস্থা আছে, যা জনগণের কল্যাণ করতে পারে।

“কিন্তু আজ নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যেন এ প্রক্রিয়া (নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কারো সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে।”

‘সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা মানতে পারি না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘যে সংকট আজ সৃষ্টি হচ্ছে, এমন সংকট যে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে, যা আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না।

“যারা আমাদের দেশ রক্ষা করে, যারা সংকটের সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়, তাদের আমরা কখনই বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই ২০২৪ সালে যারা প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আমরা জানাই; সব সময় জানাই। আহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। সেই আন্দোলনে আমাদেরও প্রায় ৮০০ ছাত্র-যুবক শহীদ হয়েছেন। ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি।

“এরপরও আমাদের শুনতে হয় যে, বিএনপি কী করেছে? বিএনপিই তো আন্দোলন শুরু করেছে, বিএনপিই তো এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে, বিএনপি তো ভিত্তি তৈরি করেছে। আজ হঠাৎ করে বিপ্লব ঘটেনি। বিপ্লবের ভিত্তি তৈরি করতে হয়েছে, এই ভিত্তি তৈরি করেছে বিএনপি।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “দলকে ছোট করার কোনো কারণ নেই। সব সময় বুক উঁচু করে বেড়াবেন। এ বিপ্লব, এ পরিবর্তনে আপনারাই হচ্ছেন হোতা, আপনারাই সামনের দিকে নিয়ে যাবেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ভালোভাবে শুনুন, এমন কথা যেন আমাদেরকে না শুনতে হয় যে, বিএনপি খারাপ কাজ করছে।

“তাহলে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যাবে। এখানে (আলোচনা সভা) ঢাকার নেতারা, ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণির নেতারা আছেন, আপনারা আপনাদের নেতৃবৃন্দ সবাইকে নিয়ে এ বিষয়গুলো সবসময় খেয়াল করবেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পিং করতে যায়, তারা কী করবে সেটা আমরা ভালো বুঝি।”
‘গণতন্ত্র আবার বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে’

সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আমরা বলতে চাই, অতি দ্রুত নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে এবং নির্বাচনমুখী জনগণের সামনে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র টিকতে পারবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে।

“দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দেশের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে এবং বর্তমান যে সরকার, এই সরকারের স্বার্থে আমরা আজ স্বাধীনতা দিবসে আহ্বান জানাতে চাই, দাবি করতে চাই, অনতিবিলম্বে কোনো ধরনের উছিলা, কারো কোনো আবদা- এগুলোর দিকে লক্ষ্য না করে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করেন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “স্বৈরাচার পতনের পর যেখানে গণতন্ত্র উত্তরণের কথা ছিল, যে জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে, এই উত্তরণে কোনো বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণ ছিল না।

“আগে ক্ষমতায় যেতে যেসব প্রক্রিয়া বিভিন্ন স্বৈরাচাররা গ্রহণ করেছে, আমরা তো ভেবেছিলাম সেখান থেকে মুক্ত হয়ে গেছি এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা ফিরে আসবে। সেটা আজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান ও নুরুল ইসলাম মনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু।


এসএস/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ছোট হয়ে আসছে দেশের শ্রমবাজার, রপ্তানি কমেছে ৩০ শতাংশ Mar 26, 2025
img
ট্রান্সফরমার চুরির অভিযোগে যুবদল-ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মী আটক Mar 26, 2025
img
টেকনিক দেখিয়ে আগামী নির্বাচনে তরুণদের বড় একটি অংশ বিজয়ী হবে Mar 26, 2025
img
ক্লাব দখল মামলার আসামি ভিপি নুর, পাল্টা মামলা Mar 26, 2025
img
ভয়ে লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ নেওয়ার সাহস করছে না যুক্তরাষ্ট্র Mar 26, 2025
img
জাপার নেতৃত্বে জি এম কাদেরকে চায় না রওশনপন্থিরা Mar 26, 2025
img
শেখ মুজিবের জন্য দোয়া চেয়ে সচিব ওএসডি, কর্মকর্তা বরখাস্ত Mar 26, 2025
img
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও মানুষ সুফল ভোগ করতে পারেনি: তারেক রহমান Mar 26, 2025
img
স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে প্রত্যেক সদস্য প্রস্তুত রয়েছে : সেনাপ্রধান Mar 26, 2025
img
সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে স্কুলছাত্রী Mar 26, 2025