উত্তরার দুর্ঘটনার পর আহতদের আহাজারিতে স্তব্ধ জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় কেঁপে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। কেউ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে, কেউ মেঝেতে বসে, কেউবা শিশুদের পোশাক আঁকড়ে কাঁদছিলেন। হাসপাতালের চারপাশে শুধু আহাজারি আর অসহায় অপেক্ষা।
এদিন হাসপাতালে গিয়ে সিঁড়ির পাশে এক মধ্যবয়সী মানুষকে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে দেখা যায়। আইসিইউর সামনে ১০-১২ জন স্বজন অপেক্ষা করছিলেন নিঃশব্দে। দুজন নারী মেঝেতে বিলাপ করছিলেন, কেউ ফোনে কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন, কেউ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন শূন্যে।
৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে স্কুলড্রেস আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাহাদ নিয়ন। তাঁর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাগনি মেহরিনের দুই হাত আর মুখ পুড়ে গেছে। নিয়ন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “ও খুব নিষ্পাপ, সারাদিন পড়াশোনা করে।”
পাশে ছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তাঁর মেয়ে নুরে জান্নাতের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার মেয়ে বলে, ‘মা, আমার সব জ্বলে’।” আরেক কোণে মেঝেতে বসে বিড়বিড় করছিলেন নাসিমা বেগম। তাঁর সপ্তম শ্রেণির ছেলে রোহানের শরীরও পুড়ে গেছে। বলছিলেন, “কত মায়ের বুক খালি হইছে রে, আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছে।”
জরুরি বিভাগের সামনে ছিল জনসমুদ্র। কেউ রক্ত দিতে দৌড়াচ্ছিলেন, কেউ রক্ত চাইতে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিমশিম খাচ্ছিল। সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায় দায়িত্ব নিতে। এই হাসপাতালের প্রতিটি তলা, প্রতিটি কোণা যেন সাক্ষী হয়ে থাকলো শিশুদের পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন আর স্বজনদের বুকভাঙা আর্তনাদের।
টিকে/