ভারতে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের স্বাধীন সংস্থা ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থাকে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পর্যালোচনা ও সত্য তথ্যকে ‘‘ভুলভাবে উপস্থাপনার’’ দায়ে আন্তর্জাতিক ‘উদ্বেগের সংস্থা’’ হিসাবে মনোনীত করার দাবি জানিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার মার্কিন ওই সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। ভারতে ২০২৪ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রতিবেদনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসসিআইআরএফের সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখেছি, যা আবারও পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মূল্যায়ন জারি রাখার ধরণ অব্যাহত রেখেছে। এই ধরনের ‘‘অ্যাজেন্ডা-ভিত্তিক’’ দাবি সংস্থাটির সত্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন ওই সংস্থার প্রতিবেদনকে ‘‘ভুয়া’’ হিসেবে অভিহিত করে ভারত প্রশ্ন তুলেছে, নিজেদের কাজে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার উদ্বেগের ক্ষেত্রে ইউএসসিআইআরএফ উদ্বেগ আদৌ সত্য কি না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউএসসিআইআরএফের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে ভুলভাবে উপস্থাপন এবং ভারতের প্রাণবন্ত বহুসংস্কৃতির সমাজের ওপর অভিযোগ তোলার ক্রমাগত প্রচেষ্টা ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য সংস্থাটির সত্যিকারের উদ্বেগের পরিবর্তে ইচ্ছাকৃত অ্যাজেন্ডাকে প্রতিফলিত করে। সত্য তথ্যকে ‘‘ভুলভাবে উপস্থাপনার’’ দায়ে আন্তর্জাতিক ‘উদ্বেগের সংস্থা’’ হিসাবে সংস্থাটিকেই মনোনীত করা উচিত।
মার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক সংস্থাটি বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে রয়েছে উল্লেখ করে নয়াদিল্লি বলেছে, সংস্থাটি সত্য বিষয় নিয়ে কাজ করবে, এমন প্রত্যাশাও আশা করে না দিল্লি। ভারতে ১৪০ কোটি মানুষ রয়েছেন; যারা মানবজাতির কাছে সমস্ত ধর্মের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে, ইউএসসিআইআরএফ ভারতের বহুত্ববাদী কাঠামোর বাস্তবতা নিয়ে কাজ করবে কিংবা ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নান্দনিক সহাবস্থানকে স্বীকৃতি দেবে; তাদের কাছে আমাদের এমন কোনও প্রত্যাশাও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের স্বাধীন সংস্থা ইউএসসিআইআরএফকে ‘‘উদ্বেগের সত্তা’’ হিসেবে শনাক্ত করে ভারত বলেছে, ‘‘গণতন্ত্র ও সহনশীলতার বাতিঘর হিসাবে ভারতের অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করার এই ধরনের প্রচেষ্টা সফল হবে না। প্রকৃতপক্ষে ইউএসসিআইআরএফকে উদ্বেগের সত্তা হিসাবে মনোনীত করা উচিত।’’
সূত্র: এনডিটিভি।
এসএন