মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি দেশটিতে ব্যাপক গৃহযুদ্ধের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সশস্ত্র বিরোধীদের সহিংসতা ত্যাগ ও সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে দেওয়া বক্তৃতায় মিন অং হ্লেইং বলেছেন, সামরিক বাহিনী একটি ‘‘গৌরবজনক’’ নির্বাচন আয়োজন এবং বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি রাজধানী নেইপিদোর বিশাল প্যারেড গ্রাউন্ডে জড়ো হওয়া শত শত সৈন্যকে বলেন, তাদের অবশ্যই সুষ্ঠু ও বহু-দলীয় ভোট আয়োজনে সহায়তা করতে হবে।
মিয়ানমারের এই জান্তা প্রধান বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। আমরা নির্বাচনের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করছি। এটি অবাধ-সুষ্ঠু এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবো। ২০২১ সালের পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে জান্তাবিরোধী সংঘাত চলছে। দেশটিতে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই আগামী নির্বাচনের আগে দেশটির কয়েক ডজন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ কিংবা নির্বাচনে অংশ নিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির সমালোচকরা বলছেন, সেনা-সমর্থিত প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় রাখতে লোক দেখানো নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন জেনারেলরা। দেশটিতে সেনাবাহিনী সমর্থিত একাধিক রাজনৈতিক দলকে নতুন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমালোচকরা।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর ক্ষমতায় আসা জান্তা বাহিনী দেশটিতে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়। দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এর মাঝেই এসব পদক্ষেপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন জান্তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বেলারুশ সফরের সময় প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, আগামী ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত মিয়ানমারের জাতীয় আদমশুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৩৩০টি শহরের মাঝে কেবল ১৪৫টিতে সরেজমিনে আদমশুমারি পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা সরকার। রাজধানী নেইপিদোর আলোচনার বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে জেনারেলরা চলতি বছরের শেষের দিকে দেশের ১৬০ থেকে ১৭০টি শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন।
জান্তার শাসনামলে কয়েক ডজন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনে কেবল পরীক্ষিত ও সামরিকপন্থি দলগুলো অংশ নিতে পারবে। সমালোচকরা জান্তার নির্বাচন আয়োজনের এমন পরিকল্পনাকে ধোঁকাবাজি বলে অভিহিত করেছেন। দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বলেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইতোমধ্যে ৫৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করেছে।
এমআর/এসএন