বরগুনার আমতলীতে নিম্নমানের উপকরণে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। তারা দোষীদের বিচার ও সড়ক পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের লোদা সেতু থেকে কাউনিয়া ইসমাইল মাস্টার বাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে। কাজটির ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা।
কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজটি শেষ করার দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় বরগুনার রহমান ট্রেডার্স এর ঠিকাদার মো. শাহিন তালুকদার। কার্যাদেশ পাওয়ার পর একই বছর মে মাসে কাজটি শুরু করেন ঠিকাদার। ৫ ইঞ্চি বেজমেন্টে বালু মিশ্রিত খোয়া দেওয়া কথা থাকলেও ঠিকাদার নিম্ন মানের খোয়া এবং কাদামাটি মিশ্রিত বালু এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ বেজমেন্টে না কেটে কাজটি শুরু করেন। এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদার আমলে না নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সড়কে খোয়া ফেলে লাপাত্তা হয়ে যান। এরপর চলতি বছর মার্চ মাসে আবার কাজ শুরু করেন। এরমধ্যে সড়কে ময়লা এবং কাদার আস্তরণ জমে খোয়া ঢেকে যায়। ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাদার আস্তরণের ওপর নাম মাত্র নিম্নমানের সামান্য খোয়া ফেলে তার ওপর কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করেন। কার্পেটিংয়ের আগে খোয়ার ওপর ৬০ ভাগ বিটুমিন ও ৩০ ভাগ কেরোসিন মিশ্রিত প্রাইম কোট দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা করেনি। ৪০ মিলিলিটার পরিমাণ কার্পেটিং করার কথা থাকলেও করা হয়েছে মাত্র ২০-২৫ মিলিমিটার। কার্পেটিং এ ১৬ মিলিগ্রাম, ১২ মিলিগ্রাম এবং ৬ মিলিগ্রাম সাইজের তিন পদের পাথর মিশ্রণে কার্পেটিং করার কথা থাকলেও ঠিকাদার কম দামের ১২ মিলিগ্রামের পাথর বেশী ব্যবহার করেছেন। প্রতি কিলোমিটার সড়কে ৭০ ব্যারেল বিটুমিন হিসেবে (প্রতিটিতে ১৫০ কেজি) ৩ কিলোমিটার সড়কে ২১০ ব্যারেল বিটুমিন দেওয়ার কথা। স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভেজাল নিম্নমানের পোড়া মবিল এবং কেরোসিন মিশ্রিত করে ১০০-১৫০ ব্যারেল দিয়ে দায়সারাভাবে চলতি মাসের গত ২২ মার্চ কাজ শেষ করেন। এরমধ্যে ঠিকাদার ১কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৯ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী বলেন, বিটুমিন দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করার দুই ঘটনার মধ্যে শক্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাতদিন পরও শক্ত না হওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কার্পেটিং করার সাত দিন অতিবাহিত হলেও এখনও নতুন সড়কে কার্পেটিং নরম অবস্থায় দেখা গেছে। এসময় সমকাল প্রতিনিধির খবর পেয়ে স্থানীয় দল বেধে ছুটে আসেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার কাজ করায় ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। নিস্ন মানের খোয়া, কাদা মিশ্রিত বালু, পোড়া মবিল, কেরোসিন মিশ্রিত বিটুমিন ব্যবহার করায় কাজ শেষ করার সাত দিন পরও হাত দিয়ে টান দিলে কার্পেটিং উঠে যায়। এসময় ক্ষিপ্ত গ্রামের নারী পুরুষ দলবেঁধে এ প্রতিনিধির সামনে হাত দিয়ে টান দেওয়ার সঙ্গে পুরো সড়কের কার্পেটিং উঠে যায়।
কাউনিয়া গ্রামের শিক্ষক কামাল গাজী অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার সড়ক নির্মাণকাজে শুরু থেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের খোয়া, কাদা মিশ্রিত বালু, ভেজাল কেরোসিন ও পোড়া মবিল মিশ্রিত বিটুমিন এবং পরিমাণে কম দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করায় এখন হাতের টানেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
ঠিকাদার মো. শাহিন তালুকদার সড়ক নির্মাণে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবকিছু নিয়ম মাফিক করা হয়েছে। কার্পেটিং কেন এখনও শক্ত হচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্পেটিং শক্ত হয়েছে তবে স্থানীয়রা শত্রুতা করে দা-খোন্তা দিয়ে খুচে খুচে কার্পেটিং তুলে ফেলছে।
সড়ক নির্মাণের দায়িত্বে থাকা আমতলী উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সড়ক নির্মাণের কোনো অনিয়ম হয়নি।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস বলেন, ১০ পার্সেন্ট জামানত বাদে এখনও ঠিকাদারের ১১ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়নি। সড়ক নির্মাণে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদি হাসান খান বলেন, সড়ক নির্মাণে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে জামানত ছাড়াও তার বিল জমা আছে। সড়ক নির্মাণে অনিয়ম করলে তা ঠিক করে নেওয়া হবে।
আরএ/এসএন