বৈষম্যের অভিযোগে ভোলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দোয়া ও ইফতার মাহফিলে হট্টগোল করেছে জুলাই-আগস্টের আহতরা।
শনিবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ভোলা জেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ এনসিপির অন্যান্য নেতাদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় আয়োজকদের সঙ্গে জুলাই-আগস্টে আহতদের উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডা হলেও অনুষ্ঠানস্থলের বাহিরে অসদাচরণের অভিযোগে স্থানীয় এক এনসিপি প্রতিনিধিকে ধাওয়া দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এসময় নানান প্রতিবাদী স্লোগান দেন তারা। তবে আয়োজকরা বলছেন এটি ভুল বোঝাবুঝি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার ভোলা জেলা পরিষদ হলরুমে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনীতিবিদ, শহীদ ও আহত পরিবারবর্গ,ছাত্র জনতা শ্রমিক পেশাজীবি এক্টিভিস্ট ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে দোয়া ও ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে জুলাই-আগস্টে আহতদের জন্য পর্যন্ত আসন রাখেনি আয়োজকরা। এতে বসার স্থান না পেয়ে ক্ষিপ্ত হন আহতরা। একপর্যায়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই আহতরা আয়োজকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং উভয়পক্ষের হাতাহাতি শুরু হলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে স্থানীয় এক এনসিপি প্রতিনিধি আহতদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। পরে অন্যান্যরা মিলে সেই এনসিপি প্রতিনিধিকে ধাওয়া দিলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার আহত মো.শাহাবুদ্দিন বলেন, গত ২ দিন আগে এই অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠান এসেছি, কিন্তু আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। আয়োজকদের আমি চিকিৎসা নেওয়ার প্রমাণপত্র দেখানোর পরও তারা আমাকে ডুকতে দেননি। আমি বাইরে বসে ছিলাম। আহতদের কোনো খোঁজ তারা নেননি।
আহত মো. মাসুম বলেন, আহতদের নিয়ে এনসিপি ইফতার মাহফিল করবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। এখানে আসার পর আহতদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি আহতদের জন্য হলেও আহতরা ছিল না, আমাদের বসার জায়গা ছিল না। এনসিপি আমাদের দল, কিন্তু তারপরও আমরা সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা পুরোপুরি বৈষম্যের শিকার।
লালমোহনের বাসিন্দা আরেকজন আহত মো. স্বপন অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ জুলাই মোহাম্মদপুর চৌরাস্তায় গুলিবিদ্ধ হই। আমার বাম চোখে ছররা গুলি লেগে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ২৪’র আন্দোলন ছিল গণ আন্দোলন, কেউ একা আন্দোলন করেনি। আমাদের নিয়েই এনসিপি দল গঠন হয়েছে। আমাদের জন্যেই আয়োজন করা হয়েছিল। স্টেজে শামীম নামে একজন আহত ভাই ওঠে বসলে তাকে ধাক্কা দেওয়া হয়। তিনি যখন বললেন আমি আহত তখন তারা বলেন তাতে কী হয়েছে। এটা তারা কিভাবে বলেন? এইখানে এনে আমাদের অপমান করা হয়েছে। আমরা চাই ন্যায্য সম্মান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক রাসেল মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও আহত যোদ্ধাদের কেউ খোঁজ নেননি। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহতদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আহত যোদ্ধারা ভোলার বিভিন্ন উপজেলাসহ ঢাকা থেকেও এসেছে। কিন্তু তাদেরকে মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, বসার জায়গা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমি জবাব চাই, আহত যোদ্ধাদের অপমান করা হলে জুলাই ন্যারেটিভ কারা ধারণ করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, শহীদ ও আহত পরিবারের মাঝে সংক্ষুব্ধ অবস্থান থাকতে পারে। আয়োজন উপলক্ষ্যে আমাদের কাছে থাকা লিস্ট অনুসারে শহীদ পরিবার ও আহতদের দাওয়াত দিয়েছি আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। অনুষ্ঠানে আরেকটি অংশ ছিল ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তাদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করতে, সে প্রস্তুতিও আমাদের ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের টোট্যাল যে ফরমাল পরিস্থিতি তাদের সংক্ষুব্ধ অবস্থান সেটা শোনার জন্য যথেষ্ট না। আমি মনে করি এটার জন্য কাইন্সিলিং প্রয়োজন। এটাও সত্যি অভ্যুত্থানের পর থেকে পুরো জাতির ট্রমার মতো অবস্থা।
এফপি/এস এন