ইরানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের!

পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হলে ইরানের উপর বোমা ফেলবে আমেরিকা, সরাসরি এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ়কে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকা এবং ইরানের আধিকারিকেরা পরমাণু চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু এই চুক্তিতে ইরান যদি শেষ পর্যন্ত সম্মত না-হয়, তবে আমেরিকা বোমা হামলা শুরু করবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তেহরানও। সূত্রের খবর, আমেরিকা হামলা করলে তার জবাব দেওয়ার জন্য তারাও ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করা শুরু করেছে। তেহরান টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের নানা প্রান্তে মাটির নীচে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করে রাখা হচ্ছে। সেগুলি যাতে যে কোনও মুহূর্তে প্রয়োগ করা যায়, তার বন্দোবস্তও করা হচ্ছে। ইরান সরকারের তরফে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর না-করলে ইরানের বিরুদ্ধে বিকল্প পরিকল্পনার কথাও অবশ্য ওই সাক্ষাৎকারে বলে রেখেছেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ইরানের উপর কিছু আনুষঙ্গিক শুল্কের বোঝা চাপানো হতে পারে। পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হলে সেই শুল্কও হতে পারে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির বিরুদ্ধে আমেরিকার অন্যতম হাতিয়ার। চার বছর আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম দফায় ইরানের উপর এই ধরনের শুল্ক প্রয়োগ করা হয়েছিল। আবার সেটাই ফেরাতে পারেন ট্রাম্প। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ওরা যদি চুক্তি না-করে, বোমা হামলা করা হবে। তবে চুক্তি না-করলে আমি ওদের উপর আনুষঙ্গিক শুল্কও আরোপ করতে পারি, চার বছর আগে যেমনটা করেছিলাম।’’


২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে বার করে এনেছিলেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে চান তিনি। এ বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে চিঠিও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই চিঠিতে পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইরানকে দু’মাসের ‘সময়সীমা’ বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, ওই সময়সীমার মধ্যে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না-নিলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করতে পারে আমেরিকা। কিন্তু ইরান তাদের অবস্থানে অনড়। ট্রাম্পের চিঠির জবাব দিয়ে সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, চাপ এবং সামরিক হুমকির আবহে তারা সরাসরি কোনও আলোচনায় যুক্ত হবে না। তবে অতীতের মতো পরোক্ষ আলোচনার পথ খোলা রাখা হচ্ছে। এর পরেই এল ট্রাম্পের বোমা-হুঁশিয়ারি।

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল আমেরিকা-সহ ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চিন। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানান, এই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তাঁর নির্দেশে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি।’’ এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল আমেরিকা। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর আবার কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

এফপি/এস এন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যারা গুপ্ত রাজনীতি করে তাদের প্রতি শুভকামনা নেই: ছাত্রদল সভাপতি Apr 02, 2025
img
তথ্য উপদেষ্টার বাবার ওপর হামলায় এ্যানির দুঃখ প্রকাশ Apr 02, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক দলটির নেতৃবৃন্দদের চাপে প্রধান উপদেষ্টা জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন: নাছির Apr 02, 2025
img
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খুঁটিতে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ Apr 02, 2025
img
হাঁটা-চলার জায়গাও ছিল না চিড়িয়াখানায়, দর্শনার্থী প্রায় দুই লাখ Apr 02, 2025
img
সিলেটে মধ্যরাতে বিএনপি-যুবদল সংঘর্ষ Apr 02, 2025
img
বেড়াতে নিয়ে গিয়ে শিশুকে ধর্ষণ, অতপর... Apr 02, 2025
img
আফগানিস্তানকে শিগগিরই সুখবর দেবেন পুতিন Apr 02, 2025
img
দম্প‌তি‌কে হয়রা‌নির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতি‌নিধি গ্রেফতার Apr 02, 2025
img
মার্কিন হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ‘বাধ্য হবে’ ইরান : খামেনির উপদেষ্টা Apr 02, 2025