কুমিল্লার মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জে যানজট নিরসনে স্থানীয়দের উদ্যোগে চালু হওয়া সিএনজি স্ট্যান্ড ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। যাত্রীবাহী অটোরিকশাগুলোকে সিরিয়ালভিত্তিক শৃঙ্খলায় পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, হঠাৎ করেই তা ‘চাঁদাবাজি’র অভিযোগে বিতর্কে জড়ায়। এ নিয়ে পুলিশের মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়দের দাবি, শৃঙ্খলার প্রয়োজনে চালু করা হয়েছিল লাইনম্যান ও কেরানির মাধ্যমে টোকেন ব্যবস্থা, যাতে একসঙ্গে সব সিএনজি না চলাচল করে। এতে যানজট অনেকটাই কমে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ প্রশাসনের জ্যেষ্ঠরা শুরু থেকেই এই ব্যবস্থার বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং প্রশংসাও করেন।
কিন্তু ২৪ মার্চ সিরিয়াল ভেঙে সিএনজিতে উঠতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতায় ক্ষিপ্ত হন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর স্থানীয় আহ্বায়ক উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী। তাকে সিরিয়ালের বাইরে থাকা সিএনজি নিতে না দেওয়ায় তিনি নিজেকে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উত্তেজনা ছড়ান এবং তার অনুসারীরা এসে কেরানি ও চালকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন পুলিশ কেরানি আবুল কালামকে আটক করে। এরপর রাতে শ্রমিক নেতারা থানায় গিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধেই পরে চাঁদাবাজি ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের হয়। দুটি মামলায় নাম উল্লেখসহ ৩০ জন এবং অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার হন অন্তত ৭ জন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, থানা ও প্রশাসনের নির্দেশে তাদের ডেকে নেওয়া হলেও পরে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। থানায় ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত নেতাদের হুমকি, মারধর ও হ্যান্ড মাইকে শ্লীলতাহানির মতো হুমকির ভিডিও ভাইরাল হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া হয়েছেন অনেকে।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা উবাইদুল্লাহ বলেন, “আমরা রিজার্ভ সিএনজি নিতে গেলে কেরানি ও লাইনম্যান আমাদের থামায়, টোকেন ছাড়া ৫০ টাকা দাবি করে। তখন আমরা প্রতিবাদ করি, পরে ওরা আমাদের মারধর করে। পুলিশকে জানানো হয়।” তবে তার কথার কোনো প্রমাণ নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় পাল্টা মামলাও করেছেন কেরানি আবুল কালামের ভাই মেহেদী হাসান। তিনি ওসি জাহিদুর রহমান ও উবাইদুল্লাহসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন আধাবেলা ধর্মঘট পালন করে। পরদিন দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরাও।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “যা ঘটেছে, তা আপনারা জানেন। নতুন করে কিছু বলতে চাই না। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।”
এই ঘটনার জেরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের ওপর থেকে চাপের কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি চালানো হচ্ছে, যাতে এলাকাজুড়ে নতুন করে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এসএস/এসএন