চাকরি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় মেয়ের পায়ে শিকল পরালেন বাবা-মা

পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকার ১৯ বছরের তরুণী আরতি সাউ। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছা ছিল, দ্রুত তার বিয়ে দেওয়া হোক। সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চাকরি ও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাইলে বাবা-মা তাঁকে ঘরে বন্দি করে রাখেন, এমনকি পায়ে শিকল বেঁধে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

আরতি সাউ উত্তর হাওড়ার সাবিত্রী মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি নিউ ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তবে কিছুদিন আগে অফিসে সেলস টিমের প্রশিক্ষণ শুরু হলে প্রতিদিন যাতায়াতের কষ্টের কারণে ওই এলাকায় থেকে যাওয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফেরার পর থেকেই শুরু হয় তার উপর পারিবারিক চাপ ও নির্যাতন।

পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বাড়িতে ফেরার পর বাবা-মা তাকে চাকরি ছাড়তে বলেন এবং দ্রুত বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয় এবং পায়ে শিকল পরিয়ে দেওয়া হয় যেন তিনি পালাতে না পারেন।

পুলিশ শুক্রবার আরতিকে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে মালিপাচঘরা থানায় নিয়ে যায়। তিনি বাবা-মার বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।

আরতির বাবা গৌর সাউ বলেন, “ও যে কোম্পানিতে কাজ করত, তারা ওকে ভুল বুঝিয়ে চাকরিতে নিয়েছে বলে আমার সন্দেহ। অনেকবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়েছে, তাই সন্দেহ আরও বেড়েছে।” তিনি আরও জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই দিনের বেলা ব্যস্ত থাকেন। মেয়েটি যাতে পালাতে না পারে, তাই পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরে আটকে রেখেছিলেন।

ঘটনাটি সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নারীস্বাধীনতা, কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণ, এবং পিতামাতার অতিরিক্ত কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আরতির মতো তরুণীদের স্বপ্ন ও সিদ্ধান্তকে সম্মান না করে এভাবে দমন করার চেষ্টা নারী অধিকার লঙ্ঘনের এক জঘন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

ঘটনার তদন্ত চলছে এবং পুলিশ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬ Nov 16, 2025
img
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে নির্দেশনা: মনিরুল হক চৌধুরী Nov 16, 2025
img
স্যামসনকে ২৪ কোটি টাকায় এনেও অধিনায়ক বানায়নি চেন্নাই Nov 16, 2025
img
লিওনেল স্কালোনির নেতৃত্বে স্বপ্নপূরণ আর্জেন্টিনার ৫৯ ফুটবলারের Nov 16, 2025
img
নির্বাচনের পক্ষে ব্যাপক ঐকমত্য দেশে বিরাজ করছে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 16, 2025
img
সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন দাবিতে সমাবেশ Nov 16, 2025
img
বিবিসির কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার চাইতে পারেন ট্রাম্প! Nov 16, 2025
img
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জে ২ মামলা, গ্রেপ্তার ৫ Nov 16, 2025
img
মায়ানমারে ৩৫ বছর পর তানিনথারি অঞ্চলের মডং শহর দখলে নিল কারেন বিদ্রোহীরা Nov 16, 2025
img
যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছে, তারা এবারও পরাজিত হবে: হাফিজ Nov 16, 2025
img
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধ, যানচলাচল বন্ধ Nov 16, 2025
img
কলকাতার সঙ্গে ১১ বছরের পথচলা শেষ আন্দ্রে রাসেলের Nov 16, 2025
img
বিএনপি যা অঙ্গীকার করে তা বাস্তবায়ন করে : খোকন Nov 16, 2025
img
আগামী নির্বাচনই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কাজ করবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 16, 2025
img
ভোটে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আ. লীগের নেই : প্রেস সচিব Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার প্লট দুর্নীতির ১ মামলার শুনানি আজ Nov 16, 2025
img
সংবিধান সংশোধন নিয়ে পাকিস্তানে অস্থিরতা, পদত্যাগ আরেক বিচারপতির Nov 16, 2025
img
কাতারে কঙ্গো সরকারের সঙ্গে কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্স একটি নতুন শান্তিচুক্তি সই Nov 16, 2025
img
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে সর্বজনীন দিকনির্দেশনা: মনিরুল হক চৌধুরী Nov 16, 2025
img
জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দরকষাকষির বিষয় নয়, টিকে থাকার প্রশ্ন : ফরিদা আখতার Nov 16, 2025