দুই বাংলার আবেগময় মিলনমেলা এবারও হচ্ছে না পঞ্চগড় সীমান্তে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও উভয় দেশের সরকারের অনুমোদন না থাকায় এবারও সেই বহুল প্রতীক্ষিত কাঁটাতারের দু'ধারে স্বজনদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ মিলবে না।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আয়োজন না থাকায় সীমান্ত এলাকায় জনসাধারণকে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে—অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর—কাঁটাতারের পাশে বসতো এই ব্যতিক্রমী মিলনমেলা। প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে উঠত আবেগঘন সেই উৎসব। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে করোনা মহামারির প্রভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই আয়োজন।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দুই বাংলার বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পঞ্চগড় তখন ভারতের জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দেশ ভাগের কারণে সীমান্তের দুই পাশে ছড়িয়ে পড়ে পরিবার-পরিজনেরা। সীমিত পাসপোর্ট ব্যবস্থায় যোগাযোগ কঠিন হয়ে পড়ায় বহু মানুষ পাসপোর্ট ছাড়া দেখা করার উপায় খুঁজতে থাকেন। এই প্রেক্ষাপটেই বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে নববর্ষে সীমান্তে দেখা করার সুযোগ চালু হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে এক আবেগঘন ঐতিহ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
প্রিয়জনদের এক ঝলক দেখতে কেউ কাঁটাতারে হাত রাখেন, কেউ চোখের পানি ফেলেন। কেউ কেউ দূর থেকে শুধু দেখেই ফিরে যান। হাসি-কান্না আর আলিঙ্গনের অভাববোধ মিলে সেই দিনটিকে রূপ দেয় এক অনন্য অনুভবে।
কিন্তু এবারও প্রশাসনের নির্দেশনা না থাকায় মিলনমেলা হচ্ছে না। অনেকেই না জেনে সীমান্তে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিজিবি সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, এ বছর মিলনমেলা আয়োজনের বিষয়ে কোনও নির্দেশনা পাওয়া যায়নি, ফলে সীমান্তে কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
বিজিবি কর্মকর্তাও জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ যেন আইন না ভঙ্গ করে, সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এসএস/এসএন