এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি চিকিৎসক বাবর আলী বলেছেন, ‘পৃথিবীতে ৮ হাজার মিটার কিংবা ততধিক উচ্চতার ১৪টি পর্বত আছে। আমি ধীরে ধীরে সবগুলোতেই আরোহণ করতে চাই।’
এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর এভারেস্ট, লোৎসে এবং এবার অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি। বাবর আলী বলেন, ‘অন্নপূর্ণা দশম সর্বোচ্চ পর্বত হলেও টেকনিক্যালি দুনিয়ার অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।
এমন একটা পর্বত এত কম সময়ের মধ্যে আরোহণ করতে পারাটা নিঃসন্দেহে আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।’
সম্প্রতি পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ করেছেন পর্বতারোহী বাবর আলী। গত ৭ এপ্রিল নেপালে অবস্থিত ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার এই পর্বত আরোহণ করেন বাবর। অভিযান শেষে ১৫ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন তিনি।
এই উপলক্ষে বাবরের ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স বুধবার (১৬ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে। চট্টগ্রামের আলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রাম মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলী নিজের ইচ্ছার কথা জানান।
বাবর পুরো অভিযান কিভাবে সামাল দিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করেন ক্লাবের সভাপতি এবং অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাবর তিনটি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত যেভাবে সামলেছে, বিশেষত অন্নপূর্ণা, এতে আমরা আশাবাদী যে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে শিগগিরই সবকটি আট হাজার মিটার শৃঙ্গেই হাসিমুখে দাঁড়াতে পারবে।
এই কীর্তি কিন্তু নেপালের শেরপারা বাদে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র পাকিস্তানের একজনেরই আছে। ১৯৫০ সালে প্রথম আট হাজারি পর্বত হিসেবে সামিট হয় অন্নপূর্ণা। আর এই ৭৫ বছরে সবগুলো আট হাজার মিটার পর্বত সামিটের কীর্তি আছে সমগ্র বিশ্বের মাত্র ৭১ জন পর্বতারোহীর।’
অন্নপূর্ণা অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবর আরো বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল নিঃসন্দেহে ক্যাম্প-২ থেকে ক্যাম্প-৩-এর পথ। এই পথের খাড়া ঢাল বেয়ে সব সময় তুষারধস, পাথর খসে পড়া চলতেই থাকে।
এসবকে অতি সাবধানে এড়িয়ে পর্বতারোহীদের আরোহণ করতে হয়। এ ছাড়া সামিট পুশ (সর্বশেষ ক্যাম্প থেকে চূড়া পানে যাত্রা) আমাদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। ৬ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩ নম্বর ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৭ শ মিটার একটানা আরোহণ করে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা। আর ফিরতি পথে সময় লেগেছে আরো ৯ ঘণ্টা। সাড়ে ২৬ ঘণ্টার এই সামিট পুশ শরীরের শেষ শক্তিটুকুরও পরীক্ষা নিয়েছে। আমি জীবনে পর্বতারোহণসহ ছোট-বড় নানান অ্যাডভেঞ্চার করেছি। তবে অন্নপূর্ণা-১ পর্বতের মতো কঠিন পরীক্ষা পূর্বে আমাকে দিতে হয়নি। তবে এতকিছুর পরও ঠিকঠাকভাবে আরোহণ করে দেশে আপনাদের মাঝে ফিরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। পৃষ্ঠপোষকসহ বাকি সবার সহযোগিতা পেলে বাকি ৮ হাজারি মিটার পর্বতগুলোতে আমার পদচারণা অব্যাহত রাখতে পারব।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল এবং আলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ। সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বাবর আলী ক্লাব কর্মকর্তাদের হাতে প্রত্যর্পণ করেন জাতীয় পতাকা, যা তার হাতে অর্পণ করা হয়েছিল ২০ দিন আগেই। ৩টি আট হাজার মিটার পর্বতে এই জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জাতিকে আনন্দে ভাসিয়েছেন বাবর। এই পর্বতারোহী স্বপ্ন দেখেন বাকি ১১টিতেও উড়বে এই লাল-সবুজ।
এফপি/এস এন