রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতি প্রত্যাহার করেছেন। আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি, যখন দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থনকারী যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। মস্কো সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাহারকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করেছিল এবং তার পর থেকেই তালেবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিচ্ছে, তাদের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদার এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাস অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ওলেগ নেফেদভ বলেছেন, ‘তালেবানের কার্যক্রমের ওপর আগে থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, যা তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে একক ফেডারেল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল, সেটি এখন স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে আইনি কার্যকারিতায় পরিণত হবে।’
গত মাসে রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল তালেবানের ‘সন্ত্রাসী’ তকমা বাতিলের জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। এর আগে তালেবান শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিকবার রাশিয়া সফর করেন।
২০২২ ও ২০২৪ সালে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ফোরামে সেন্ট পিটার্সবার্গে তালেবান প্রতিনিধিদল অংশ নেয় এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে তালেবানের প্রধান কূটনীতিক রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে মস্কোয় বৈঠক করেন।
এদিকে এই তকমা প্রত্যাহার করা তালেবান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সমতুল নয়। তারা এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এতে করে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বৈঠক করতে এখন রুশ কর্মকর্তাদের আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না।
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
তালেবানকে ঘিরে মস্কোর মনোভাব গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে ১৯৯৪ সালে, আফগান গৃহযুদ্ধ চলাকালে। এদের অনেকেই ছিল সেই মুজাহিদিন, যারা বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ হাজার হাজার সোভিয়েত সেনার প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠেছিল এবং তা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত করেছিল।
২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।কারণ তারা উত্তর ককেশাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবানের পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা রাশিয়া ও অঞ্চলটির অন্য দেশগুলোকে নতুন করে কৌশল নির্ধারণে বাধ্য করে। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই পরিবর্তন।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়া কাবুলে প্রথম ব্যাবসায়িক প্রতিনিধি অফিস খোলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্যাস পাঠাতে আফগানিস্তানকে একটি ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
রাশিয়া ও তালেবান কর্তৃপক্ষ—উভয়ই ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএসকে) গোষ্ঠীকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে, যারা আফগানিস্তান ও রাশিয়ায় ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের মার্চে মস্কোর একটি কনসার্ট হলে চালানো হামলা, যাতে ১৪৫ জন নিহত হয়।
অন্য দেশগুলোর মধ্যেও তালেবান শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যদিও এখনো কোনো দেশ তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ২০২৩ সালে চীন কাবুলে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা প্রথম দেশ। তারা তালেবান শাসকদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কাজাখস্তানও গত বছর তালেবানকে তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
এমআর/এসএন