ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের পরিবর্তে 'সংস্কার'কে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে যেই ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে, সেই অধিকার কেন এখনো নিশ্চিত হচ্ছে না, বরং বিলম্বিত হচ্ছে—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘ইলিয়াস আলী গুম প্রতিরোধ কমিটি’র আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্মরণে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন।
অনুষ্ঠানে রিজভী প্রশ্ন তোলেন, “গণতন্ত্র মানে তো নির্বাচন, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার। তাহলে কেন সরকার এসবের বিকল্প হিসেবে সংস্কারের কথা বলছে? ভোটাধিকার নিশ্চিত না করে কেন সংস্কারকে সামনে আনা হচ্ছে?”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় ৬০ লাখ মামলা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও এসব মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নেতা-কর্মীদের এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।”
রিজভী বলেন, “সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ডিসেম্বর থেকে জুনের দোলনায় দুলছে। অন্তর্বর্তী সরকার কেন এখনো স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না, তার জবাব জনগণ চায়।”
তিনি অভিযোগ করেন, “যারা বিএনপি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে বসানো হচ্ছে না। এতে বোঝা যায়, একটি পরিকল্পিত নকশা অনুযায়ী সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এই পক্ষপাতমূলক আচরণই মানুষকে ধোঁয়াশায় ফেলছে।”
রিজভী বলেন, “আট মাস পার হলেও এখনো ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম কিংবা সুমনসহ গুম হওয়া নেতাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গঠিত গুম কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, “সিলেট সীমান্তে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতায় ইলিয়াস আলী সক্রিয় থাকায় তাকে সহ্য করতে পারেনি তৎকালীন সরকার। যৌথ প্রযোজনায় তাকে গুম করা হয়েছে।”
দোয়া মাহফিলে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, “আমরা গুম কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট বার্তা আসেনি। সামাজিক মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে নানা তথ্য প্রচার হচ্ছে, কিন্তু কোনটা সত্য তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি খবর এসেছে যে শতাধিক বাংলাদেশি ভারতের কারাগারে বন্দি। আমরা এ নিয়ে বিভ্রান্ত। প্রতিবছর গুম দিবস পালন করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে এভাবে নিখোঁজ না হতে হয়, সেই দাবিই করছি।”
তিনি সরকারের কাছে জবাব চান—“আপনারা গঠিত কমিশন বা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে গুম বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট করে জানান।”
এসএস