ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের শিকার বাংলাদেশ-পাকিস্তান : সাবেক সিনেটর

‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দেশই ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান বাংলাদেশের মতোই শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। যদিও ইতিহাসের পথপরিক্রমায় আজ তারা পৃথক দুটি দেশ। এ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান চায় এতদঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে দারুণ একটি সম্পর্ক তৈরি করতে।' এমন মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের প্রতিরক্ষা সচিব, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল কাইয়ুম।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কথা বলেন।

আগামী ২৭ এপ্রিল দুদিনের সফরে ঢাকায় থাকার কথা পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের। তার আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তিনি ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন এরইমধ্যে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের এই আগমন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। কারণ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে সফর হবে এটি। এর আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকায় এসেছিলেন।

এই সফর উপলক্ষে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন আবদুল কাইয়ুম।

পাকিস্তানের কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রসঙ্গ টেনে আবদুল কাইয়ুম বলেছেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের মতো একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোই পাকিস্তানের কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর কেন্দ্রবিন্দু।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রভাব নিয়ে এই প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার বাইরের চাপ প্রত্যাখ্যান করার সক্ষমতা রয়েছে।

ক্ষুধা ও সশস্ত্র সংঘাতসহ ভারতের অভ্যন্তরেই নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে অবদমিত রাখার চর্চা থেকে বিরত থাকবে।

সামরিক বিশেষজ্ঞ কাইয়ুম কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেন এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগও তোলেন। এক্ষেত্রে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনের বরাত দেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই সচিব বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক থাকুক, ভারত তা চায় না।

ধর্মীয় ও আদর্শগত মিলের জায়গা থেকে পাকিস্তান বাংলাদেশকে একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে উল্লেখ করে কাইয়ুম বলেন, উভয় দেশই ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে।

পিএমএলএনের এই নেতা বলেন, প্রধানতম আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার জোরদার সম্পর্ককে সমর্থন জানাবে। কারণ উভয় দেশেরই চীনের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা উভয়েই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ব্রি)-এর গুরুত্বপূর্ণ উপকারভোগী।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বার্ষিক অর্থনৈতিক লেনদেন এক বিলিয়ন ডলারের নিচেই রয়ে গেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

কাউয়ুম জোর দিয়ে বলেন, (সামনের দিনে) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসহাক দারের সফর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মনে করেন আবদুল কাইয়ুম।


আরএম/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নয়জনের দল নিয়েও বায়ার্নকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি Jul 06, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে দলিল লেখকপট্টিতে ভয়াবহ আগুন Jul 06, 2025
img
পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম Jul 06, 2025
img
সদিচ্ছা না থাকলে উপদেষ্টার চেয়ার ছেড়ে দিন: রিফাত রশীদ Jul 06, 2025
img
সংসদ নির্বাচন আটকানোর শক্তি কারো নেই : গয়েশ্বর Jul 06, 2025
img
পিআর নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নামে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ড ভুয়া Jul 06, 2025
img
‘আমেরিকা পার্টি’ নিয়ে ইলন মাস্কের জনমত জরিপে ৬৫% সমর্থন Jul 06, 2025
img
হাতিরঝিলে রাতের আঁধারে হবে নারী দলের অভিনব সংবর্ধনা Jul 06, 2025
img
‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’ নামটাই যেন ঋতুপর্ণার পুরো চরিত্র Jul 06, 2025
img
অস্ত্রোপচারের পর বিশ্রামে দীপিকা কক্কর, মানতে হচ্ছে কড়া নিয়ম Jul 06, 2025
img
আজ পবিত্র আশুরা Jul 06, 2025
img
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানই হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি : নাহিদ ইসলাম Jul 06, 2025
img
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক উৎসবমুখর নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি : প্রিন্স Jul 06, 2025
img
পিআরের বিরোধিতা করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভেঙেছেন : মারুফ Jul 06, 2025
img
‘বোলাররাই মার খায়, তুই পারবি’, তানভিরকে বলেছিলেন মিরাজ Jul 06, 2025
img
পাহাড়ি মেলার মাধ্যমে আমরা ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছি : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Jul 06, 2025
img
ইসলামি দলগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নাই : বিএনপি নেতা হারুন Jul 06, 2025
img
সারজিসের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া Jul 06, 2025
img
বিশ্বাস ছিল যে ২৪৮ রান আমরা ডিফেন্ড করতে পারব : মিরাজ Jul 06, 2025
img
আরব্য রজনীর রূপে নেটিজেনদের নজর কাড়লেন টিনা দত্ত Jul 06, 2025