ম্যারাথন দৌড়ানোর সময় শরীরে কী হয়?

ম্যারাথন—২৬.২ মাইল দীর্ঘ এই দৌড় কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, মানবদেহের জন্য এটি অন্যতম চরম শারীরিক চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি পদক্ষেপে শরীরের হাড়, পেশী, হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গের ওপর পড়ে মারাত্মক চাপ। কিন্তু আসলে দৌড়ানোর সময় এবং এরপর আমাদের শরীরে কী ঘটে?

গবেষকদের মতে, ম্যারাথন দৌড়ের সময় শরীরের পায়ের হাড় ও পেশীতে ছোট ছোট ক্ষতি হতে পারে। এমনকি পেশীগুলো এত বেশি কাজ করে যে ক্ষুদ্র আকারে ভেঙেও যায়। তবে আশার কথা হলো—বিশ্রামের সময় শরীর নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত ও পুনর্গঠন করে, এবং আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

‘টাফটস ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’-এর ক্রীড়া চিকিৎসক শেন ডেভিস বলেন, সঠিক প্রশিক্ষণ থাকলে শরীর ধীরে ধীরে অভিযোজিত হয়। এতে দৌড়বিদের কার্ডিওভাসকুলার কার্যক্ষমতা, ফুসফুসের সক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কিডনি ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তবে হঠাৎ করে বেশি দৌড়ালে শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে। ডেভিসের মতে, একটানা একই গতিতে দৌড়ালে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে বারবার চাপ পড়ে, যা পায়ের গোড়ালির ব্যথা বা স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের মতো আঘাতের কারণ হতে পারে।

ম্যারাথন প্রশিক্ষণে কেবল দৌড় নয়, বরং বিকল্প ব্যায়ামেরও ভূমিকা রয়েছে। ডেভিসের পরামর্শ—সাঁতার কাটা, সাইক্লিং কিংবা অন্যান্য লো-ইমপ্যাক্ট ব্যায়াম শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই পেশী গঠন ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

এছাড়া, নিয়মিত স্ট্রেচিং পেশীগুলোকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে এবং ব্যথা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। যদিও ম্যারাথন দৌড়বিদদের পেশী ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল, তবুও সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে ঝুঁকি থেকেই যায়।

গবেষকরা বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন, যাদের আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে বা প্রশিক্ষণে ঘাটতি আছে, তাদের জন্য ম্যারাথন হতে পারে বিপজ্জনক। কারণ, এমন দীর্ঘ দৌড় শরীরের প্রতিটি অঙ্গের ওপর চাপ ফেলে। তাই পারফরম্যান্সের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা।

ম্যারাথন দৌড় মানেই শুধুমাত্র মানসিক দৃঢ়তা নয়, শারীরিক দক্ষতাও। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে এটি শরীরের জন্য উপকারী হলেও, অবহেলায় তা হতে পারে বড় বিপদের কারণ। তাই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য উপকার পেতে চাইলে ধৈর্য, পরিকল্পনা ও নিয়মিত অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।


এসএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তিন দফা দাবিতে কাঁথা-বালিশ নিয়ে জবি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান Apr 20, 2025
img
ফিফা চাইলে ৬৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করতে রাজি সৌদি আরব Apr 20, 2025
img
সিরাজগঞ্জে মামা-মামি-বোনকে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড Apr 20, 2025
img
নববধূ রেখাকে জুতাপেটা করে বরণ করেছিল শাশুড়ি Apr 20, 2025
img
নগরীর যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি : চসিক মেয়র Apr 20, 2025
img
আজ খারাপ খেলেছি তাই বলা যাবে না তারা চেষ্টা করছে না : সালাউদ্দিন Apr 20, 2025
img
নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত নারী চিকিৎসক দিয়ে কেন নয় প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি Apr 20, 2025
img
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপুর ৪৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, গাড়ি-এ্যাপার্টমেন্ট জব্দ Apr 20, 2025
img
চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরোনো : ঢাবি উপাচার্য Apr 20, 2025
img
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নতুন ডিজি শফিউল বারী Apr 20, 2025