সরকার দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করছে : জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দাবি করেছেন সরকার দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করছে। তিনি বলেন, এটা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারাই প্রয়োজন মতো সংস্কার করবেন। এখন যারা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন তারা তো এলিয়েন। তারা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এই দেশের মঙ্গল হবে না।

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে বর্ধিত সভার দ্বিতীয় দিনে এসব কথা বলেন জিএম কাদের।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। গ্রহণযোগ্যতা না পেলে দেশে বিনিয়োগ হবে না, কর্মসংস্থান হবে না, শুধু বেকারত্ব বাড়বে। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলেও কেউ এখানে বিনিয়োগ করবে না। দেশের কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, কৃষকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। যারা আলুর দাম কম দেখে খুশি হচ্ছেন, তারা কৃষকের কান্না দেখেননি। এখন রেমিট্যান্স আসছে, রেমিটেন্সের ওপর একটা দেশ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, সরকারকে বৈধ করতেই সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। সরকার একটা দল গঠন করেছে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সংস্কার চালাচ্ছে। যেনতেনভাবে তাদের নির্বাচনে পাস করাবেন, তা কি হাসিনার নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে? শেখ হাসিনা সব কিছু হাতে নিয়েই থাকতে পারল না, আপনারা কত দিন থাকতে পারবেন? যাদের নির্বাচন থেকে বাদ দেবেন তারা ঘরে বসে আঙুল চুষবে? দেশে স্থিতিশীলতা আসবে কেমন করে? ভালো নির্বাচন দিতে হবে, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যারা শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিল, তাদেরকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ষড়যন্ত্রকারীদের আবেদন সাদরে গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশনের যে ভদ্রলোক ষড়যন্ত্রকারীদের আবেদন গ্রহণ করেছেন, তিনি নির্বাচনে আমার বিপক্ষে কারচুপি করতে চেয়ে ধরা পড়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখন সেই লোকটি আমার বিরুদ্ধ লেগেছে।

জাতীয় পার্টি যেন কাউন্সিল করতে না পারে সেজন্য কোনো হল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, কাউন্সিল করতে না পারলেই আমাদের বাতিল করতে পারবে। এই পলিসিতে ষড়যন্ত্র করছে তারা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আমাদের হল ভাড়া দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি আগে ছিল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের মতো, এখন সরকারের সঙ্গে আছে এমন একটি দলের অঙ্গ সংগঠনের মতো আচরণ করছে। শেখ হাসিনা পেশাজীবীদের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিল, বর্তমান সরকারও শেখ হাসিনার সেই ফর্মুলা গ্রহণ করেছে। কে কি করবে তা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই নিয়ন্ত্রণ করার মাঝেই তারা প্রচুর টাকা কামাই করছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, নব্য ফ্যাসিবাদকে রুখতে হবে। নব্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের সোজা করতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি কি বন্ধ হয়েছে, নাকি বেড়েছে? অফিস আদালতে দুর্নীতি ছাড়া কাজ হচ্ছে? চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফ্যাসিবাদের চেয়ে ভালো কিছু করতে পেরেছে? ভালো কিছু করার ইচ্ছাও দেখছি না। মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। দোসরদের নিয়ে ফাইভ স্টারে মুরগির রান খাচ্ছেন আর আমাদের নেতাকর্মীদের ছোট্ট একটি হোটেলে ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা করছেন।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের কান্না শোনার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের কাছে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে তারা ব্যবসা করতে পারছে না। এর চেয়ে বড় ফ্যাসিবাদ আর কি হতে পারে? এর চেয়ে বড় অত্যাচার আর কি হতে পারে? রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদকে রুখতে হবে। কাউকে আক্রমণ করতে বলছি না কিন্তু আক্রান্ত হলে তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাশিয়া নিয়ে সোমবার ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা’ দেবেন ট্রাম্প Jul 12, 2025
মিডফোর্ডের ঘটনায় বিএনপিকে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুঁশিয়ারি Jul 12, 2025
img
অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ বন্ধে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স চুক্তি Jul 12, 2025
img
সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন প্রেসসচিব Jul 12, 2025
img
প্রতিটি হামলার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন জড়িত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন Jul 12, 2025
img
ফেনীতে বন্যার পানি নামছে, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতি Jul 12, 2025
পুলিশের সুপারশপ ঘুরে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন আইজিপি Jul 12, 2025
চট্টগ্রামে ১১ খণ্ডে বিভক্ত লাশ! স্ত্রীর মরদেহ কমোডে ফ্লাশ করলো স্বামী! Jul 12, 2025
"বাবু খেয়েছো? জিগ্যেসের জন্যতো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বানাই নাই!" Jul 12, 2025
img
'ভিডিওতে থাকলেও আমি কাউকে মারিনি' মিডফোর্ডের ঘটনার আসামী টিটন Jul 12, 2025
img
অতিরিক্ত সচিবসহ তিনজনকে ওএসডি Jul 12, 2025
img
ঢাকায় পৌঁছালেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট Jul 12, 2025
img
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য Jul 12, 2025
img
পিআর পদ্ধতি একটি অপরিকল্পিত প্রস্তাবনা মাত্র: ১২ দলীয় জোট প্রধান Jul 12, 2025
img
রিয়ালের আবেদন নাকচ করল লা লিগা সভাপতি Jul 12, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯১ Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় আসামি রবিনের স্বীকারোক্তি, টিটন ৫ দিনের রিমান্ডে Jul 12, 2025
পুলিশ মেসের ওয়াশরুম ঘুরে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
পুলিশকে খেলাধুলায় জোর দিতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025