ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ওবামা, বাইডেন ও ক্লিনটন

বারাক ওবামা ট্রাম্পের 'বুলিং' বা দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন, জো বাইডেন সতর্ক করেছেন যে তিনি সোশাল সিকিউরিটিকে ধ্বংস করছেন, আর বিল ক্লিনটন অভিযোগ তুলেছেন হীনমন্যতা নির্ভর রাজনীতি ও কর্তৃত্বের মানসিকতার বিরুদ্ধে।

মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন—যা অত্যন্ত বিরল, কারণ সাধারণত সাবেক প্রেসিডেন্টরা তাদের উত্তরসূরিদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন না।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও বারাক ওবামা, জো বাইডেন ও বিল ক্লিনটন সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি, তবে তাদের বক্তব্যে যে ইঙ্গিত ছিল, তা ছিল স্পষ্ট।

তাঁদের বক্তব্য ও উপস্থিতির মাধ্যমে এই ডেমোক্রেটিক নেতারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমেরিকান গণতন্ত্র এখন এক অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বহু পুরনো নীতিমালা ও ঐতিহ্য ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, এবং সে কারণে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিক্রিয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমান জীবিত প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কেবল রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ ট্রাম্পের শাসনামলে নীরব রয়েছেন, যদিও তার ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব অনেকাংশেই প্রকাশিত হয়েছে।

ওবামা আমেরিকানদের আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্পের ‘বুলিং’-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প সোশাল সিকিউরিটির পবিত্র অঙ্গীকার ধ্বংস করছেন। ক্লিনটন সমালোচনা করেছেন হীনমন্যতা ভিত্তিক রাজনীতির এবং অন্যদের দমন করার মানসিকতার।

ওবামা কী বলেছেন?
৩ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের আপস্টেট অঞ্চলের হ্যামিলটন কলেজে দেওয়া বক্তৃতায় ওবামা ট্রাম্পের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আক্রমণের বিরুদ্ধাচরণ করেন এবং সবাইকে পদক্ষেপ নিতে বলেন।

ওবামা বলেন, “এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। কেউ এসে আপনাকে বাঁচাবে না। এই গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে ‘নাগরিক’—সাধারণ মানুষ, যে বলে, ‘না, এটা ঠিক নয়।’”

এবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ওবামার বক্তৃতা ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের নতুন ট্যারিফ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আইন সংস্থাগুলোর প্রতি হুমকি এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ব্যাঘাত সৃষ্টির বিরুদ্ধে ছিল। তার মুখপাত্র এই মন্তব্যের লিখিত প্রতিলিপি মিডিয়ামে প্রকাশ করেছেন।

এর আগে, ওবামা ট্রাম্পকে “একজন ৭৮ বছর বয়সী ধনকুবের, যিনি নিজের সমস্যা নিয়ে অহেতুক বিলাপ করে যাচ্ছেন” বলেও কটাক্ষ করেছিলেন এবং কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, তিনি “পাগলাটে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন।”

বাইডেনের ট্রাম্পবিরোধী মন্তব্য
১৬ এপ্রিল, শিকাগোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধি ও উপদেষ্টাদের জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতা দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুতেই নেওয়া নীতিগুলোর কঠোর সমালোচনা করেন।

এবিসি নিউজ জানায়, বাইডেন ইলন মাস্কের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কাটছাঁটেরও সমালোচনা করেন এবং বলেন, “এত কষ্টে থাকা মানুষদের আরও নির্দয়ভাবে শাসন করা উচিত নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রশাসন মাত্র ১০০ দিনের মধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।”

ইউরোনিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেন “জাতীয় কল্যাণব্যবস্থাকে কুঠারাঘাতে” ধ্বংস করার জন্য। ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা সেবাকে সংকুচিত না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, চাকরিতে কাটছাঁট পরিকল্পনার কারণে বিলম্বিত বা ব্যাহত সেবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—যা বাইডেন বলেছেন “লাখ লাখ পরিবারের জন্য বিপর্যয়কর” হবে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, বাইডেনের বক্তৃতা ছিল প্রায় ৩০ মিনিট এবং প্রায় ২০০ মানুষের সামনে প্রদত্ত। তিনি ট্রাম্পকে সরাসরি নাম না নিয়ে “this guy” বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের বয়স নিয়ে ক্লিনটনের ব্যঙ্গ
শনিবার ওকলাহোমা সিটিতে ১৯৯৫ সালের আলফ্রেড পি. মুরাহ ফেডারেল বিল্ডিংয়ে বোমা হামলার ৩০তম বার্ষিকীতে বক্তৃতা দেন বিল ক্লিনটন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বের ধরন ও ভাষার সমালোচনা করেন।

ক্লিনটন বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প—একটি নিরবিচারে ধারাবাহিক চরিত্র—এখনও বিভাজন, দোষারোপ আর অবজ্ঞা করে যাচ্ছেন।”

ক্লিনটন ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টার বিরোধিতা করে বলেন, নেতৃত্বে মাঝে মাঝে ভুল স্বীকার করা ভালো, “নিজেকে মাঝে মাঝে ভুল বললে ক্ষতি নেই।”

তিনি বক্তব্য শেষ করেন আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি ও মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে: “আমরা কি সত্যিই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাই—শুধু প্রমাণ করার জন্য যে আমরা সবসময় ঠিক আর আমাদের ক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?”

ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে, এক সময়ের মধ্যে এতজন সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রকাশ্যে এমন সমালোচনামূলক মন্তব্য অতীতে দেখা যায়নি। তারা সবাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার এজেন্ডার গতি ও ধরণে বিস্মিত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

আরআর/এসএন

Share this news on: