‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে মাদারীপুরে কাটা হলো শতবর্ষী বটগাছ

মাদারীপুরে একটি শতবর্ষী বটগাছকে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর পুরো দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (০৫ মে) সকাল থেকে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমগীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে গাছটি কাটা শুরু করেন স্থানীয় মুসল্লি ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। একে একে ডালপালা থেকে শুরু করে দণ্ডায়মান কাণ্ডগুলো কেটে ফেলা হয়। পাপ ও শিরকের অভিযোগ এনে শতবর্ষী গাছটি কেটে ফেলেন তারা। এরইমধ্যে গাছটি কেটে ফেলায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার (০৬ মে) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের লোকজন। গাছটি কাটার সঙ্গে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামের কুমার নদের পাশে স্থানীয় হান্নান হাওলাদার ও সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন একটি বাগানের মধ্যে শত বছরের একটি বটগাছ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে গাছটিকে ঘিরে স্থানীয়রা নানা কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। স্থানীয় মুসলাম ও হিন্দু উভয় ধর্মের কিছু মানুষ মনের বাসনা পূরণ, রোগ বালাই থেকে মুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে মানত করতেন।

গাছের গোড়ায় মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালাতেন। পাশাপাশি নতুন গামছা, কাপড়, মিষ্টিসহ নানা জিনিসপত্র রেখে যেতেন। সম্প্রতি বৈশাখকে ঘিরে এ বটগাছের নিচে মেলা ও বাউল গানের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। এতে করে চোখে পরে স্থানীয় কয়েকজনের। তারা বাধা দিলে আর সেখানে বৈশাখের এই আয়োজন হয় না। তবে মানতের বিষয়টি চলতে থাকে।

পরে স্থানীয় কয়েকজন আলেম ও জনতা মিলে সোমবার সকালে গাছ কাটা শুরু করেন। সারাদিন তারা গাছটি কাটেন। গাছটির প্রায় অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন বটগাছটির গোড়ার সামান্য অংশ কাটা বাকী আছে। স্থানীয়দের দাবি, গাছটির মালিক মাত্র ১৫০০ টাকায় গাছ বিক্রি করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, আমি বিয়ের পর প্রায় ৩০ বছর ধরে এ গাছটি দেখে আসছি। কিন্তু সামান্য কিছু অজুহাত দিয়ে গাছটি কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এই গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু শতবছর বয়সী গাছটি কাটা ঠিক হয়নি।

স্থানীয় মো. মাহবুব হোসেন বলেন, গাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। নদী পার হয়ে এখানে বটের ছায়ায় অনেক মানুষ বিশ্রাম নিতো। পাপ ও শিরকের অজুহাত দিয়ে গাছটি কাটা ঠিক হয়নি। তবে এগুলো বন্ধের জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতেন।

মাদারীপুর বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি আমরা জানি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেইভাবে পরবর্তী কাজ করা হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, গাছের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে গাছটি এখনো জীবিত আছে। আমরা গাছটি বাঁচিয়ে রাখার পদক্ষেপ নেব। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়ির তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

তবে ঘটনার পর থেকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং গাছের মালিক উভয় গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই তাদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ