১৭ কোটি জনসংখ্যার জন্য ৬১ ব্যাংক, বিশ্বে চিত্র বিরল!

বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের জন্য চালু রয়েছে ৬১টি ব্যাংক, যা শুধু দেশের জন্য নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অনুমোদন দেওয়ার ফলে দেশের ব্যাংকিং খাত এখন গুরুতর সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থনীতিবিদরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গত এক দশকে সরকারের পক্ষ থেকে নয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা এখন নিজেই সরকারের জন্য বড় ধরনের চাপ ও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকের সংখ্যা কমানো ছাড়া ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৪৭ লাখ। অথচ ১০ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ৫.৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব রয়েছে। নামমাত্র এইসব হিসাব পরিচালনা করছে ৬১টি ব্যাংক। অথচ এই সংখ্যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ব্যাংকের সংখ্যা ৩৪টি। পাকিস্তানে ব্যাংকের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। থাইল্যান্ডে রয়েছে ১৮টি, শ্রীলঙ্কায় ১৩টি, আর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের জিডিপির নাইজেরিয়ায় রয়েছে মাত্র ২টি ব্যাংক। ফিলিপাইনে ১৭টি, মিশরে ৩৯টি এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯টি ব্যাংক রয়েছে।

নতুন ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় স্বৈরাচার হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, আবার লুটপাট ও অর্থপাচারের মাধ্যমে ফেলে দেয়া হয় নাজুক পরিস্থিতিতে। ফলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ব্যাংকিং খাতেই।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৯০ শতাংশই ব্যাংক নির্ভর। তবে অর্থনীতিতে এক ডজনেরও বেশি ব্যাংক যুক্ত হলেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক খাতের সম্পদ বড় হতে পারেনি। সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এমন ব্যাংক বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হওয়া উচিত, বলেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতির আকার বিবেচনায় দেশে কতগুলো ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সে দিক বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরএ/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
দাওয়াত না পাওয়ায় মাদ্রাসার অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে নষ্ট করে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা Sep 15, 2025
img
সেলেনা গোমেজের নতুন গান ‘সিঙ্গেল সুন’ আসছে শিগগিরই! Sep 15, 2025
img
ভিসি স্যারের প্রতি আমার সম্মান বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে: সাহস Sep 15, 2025
img
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘দৃষ্টিকটু’ পোশাক, ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুক্তি Sep 15, 2025
img
সাকিবের পরিবর্তে দলে যুক্ত হলেন স্কটল্যান্ডের কারি! Sep 15, 2025
img
প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সিনেমা শেখাতে চান আমির Sep 15, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলায় আর দু’একজনের সাক্ষ্য নেয়া হবে: চিফ প্রসিকিউটর Sep 15, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ১১ হাজার টন ইলিশ Sep 15, 2025
img
আওয়ামী লীগ আর হিন্দুস্তান একই পথের সাথী: জয়নুল আবদিন ফারুক Sep 15, 2025
“মানুষ সচেতন না হলে, পাসপোর্ট অফিসের দালাল থামবে না!” Sep 15, 2025
img
আপেলের সঙ্গে কমলার তুলনা, ‘সাইয়ারা’ প্রসঙ্গে আমিশা পাটেল Sep 15, 2025
img
পদোন্নতি পাওয়া পুলিশের ৬২ কর্মকর্তাকে একযোগে পদায়ন Sep 15, 2025
img
আ. লীগ ফিরে এলে তোমাদের হাড্ডিও খুঁজে পাওয়া যাবে না : ইলিয়াস Sep 15, 2025
img
শপথ নিলেন নেপালে সুশীলা কার্কির ৩ মন্ত্রী Sep 15, 2025
img
আজানের শব্দে কবর থেকে নড়ে উঠলো নবজাতক, পরিবার পলাতক Sep 15, 2025
img
ইতালিতে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হন সোহা আলি খান Sep 15, 2025
নবুওয়াতের আগে নবীজির ব্যক্তিত্ব | ইসলামিক জ্ঞান Sep 15, 2025
নবীজির বিয়ের ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Sep 15, 2025
এবার আইটেম গানে ধরা দেবেন সামিরা খান মাহি Sep 15, 2025
পাকিস্তানের দিকে ফিরেও তাকালেন না ভারতীয় ক্রিকেটাররা Sep 15, 2025