ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়নের মাধ্যমে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট গঠন হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবীদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক।
তবে গত ৮ মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার সরকার, এমনটাই অভিযোগ অনেকের। আওয়ামী লীগে বিচার ও নিষিদ্ধের দাবি জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের। এর মধ্যেই গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে থাইল্যান্ডে যেতে সক্ষম হন শেখ হাসিনার আমলে টানা দুই বার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আব্দুল হামিদ।এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
এসব কিছুর জবাব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সরকারে ব্যার্থতার কিছু কারণও জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে র্দীঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা। পুরাতন বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলাই এখন সমাধান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে লেখা ওই পোস্টে মাহফুজ আলম বলেন, ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। ফলে কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র। জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই। কিন্তু, ঠিকই প্রশাসন, বিচারবিভাগ, পুলিশে তারা স্টেইক নিয়ে বসে আছেন।এস্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধিদের অবস্থান তুলে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র মাত্র দু'জন। ছাত্র প্রতিনিধিদেরকেও এস্টাবলিশমেন্ট রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোনঠাসা করে রেখেছে। আমরা দু'জন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং এক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসাবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে। ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়াতে তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এজন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘমেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসাবে টেকসই। যাইহোক! এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভুত্থানের ছাত্র- জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।
তিনি আরো বলেন, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোম্পাইজড। মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেয়া যায়নি। পুরাতন দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বি-দলীয় বৃত্তে বন্দি। বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ- শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থীরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নূতন বাস্তবতায় আবগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন। বামপন্থীরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল।
মাহফুজ আলম বলেন, সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ হাতেগোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নূতন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক এলায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই। শহিদ- আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সকল অংশীজন অসফল। অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সাথে সাথে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এজন্য দায়ী।
তিনি আরো বলেন, সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে ( ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য এস্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমান। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতোমধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এর সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সমাধান? রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা। এগুলোনকরার পূর্বশর্ত হল, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরাতন বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।
এফপি/এস এন