ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে তথ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। একদিকে সীমান্তে গোলাগুলির খবর, অন্যদিকে মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ছবি। এই পরিস্থিতিতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও পাকিস্তানের দৈনিক ডন এমন একাধিক ‘ভুয়া দাবি’র তথ্য উন্মোচন করেছে, যা ভারতের গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারত আজাদ কাশ্মিরসহ পাকিস্তানের কয়েকটি অঞ্চলে মিসাইল হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর জবাবে পাকিস্তান ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে বলে জানায় ইসলামাবাদ। এর পর থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মির, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের তিনটি সেনাঘাঁটিতে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যদিও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী তা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালে ছড়িয়ে পড়ে নানা ‘পাল্টা হামলা’র খবর। দাবি করা হয়, পাকিস্তানের দুটি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আটক করা হয়েছে দুই পাইলটকে, হামলা হয়েছে লাহোর ও করাচি বন্দরে। কিন্তু আল জাজিরাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা এসব দাবি “গুজবের বন্যা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে কোনো পাল্টা হামলা চালাইনি। ভারতীয় মিডিয়া হয়ত জনমতকে প্রভাবিত করতে বা মিথ্যা সাফল্য দেখাতে এসব করছে।”
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন জানায়, ভারতীয় মিডিয়ায় এক ব্যক্তির ছবিকে ‘পাকিস্তানি পাইলট’ বলা হচ্ছে, অথচ সেটি ২০১৬ সালে তোলা একটি ছবি যেখানে তুরস্কের সেনারা একটি বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একইভাবে করাচি বন্দরের ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে এই বছর জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া একটি বিমান দুর্ঘটনার দৃশ্য।
এমনকি ইরান কর্তৃক ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটিতে ২০২৩ সালের হামলার ভিডিওকেও পাকিস্তানে ভারতের হামলা বলে চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ডন।
এই বিভ্রান্তির মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছে।
চলমান উত্তেজনা ও ভুয়া তথ্যের প্রবাহে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এসএস