বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করার অপ্রয়াস চলনো হচ্ছে কি না, জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচার বিএনপিসহ সবাই চায়। জনগণ আওয়ামী লীগকে আর দেখতে চায় না। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ অনুপস্থিত এবং রহস্যজনকও বটে।’
তিনি আজ শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের উত্তর বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌর বিএনপির ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই কর্মী সমাবেশে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ব্যাপক হত্যা, গুম, দমন, নিপীড়ন, ভোটাধিকারসহ জন অধিকার হরণ, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। ছাত্র, গণ-অভুত্থানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।গণশত্রু ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের রাজনীতির চ্যাপ্টার ৫ আগস্ট ক্লোজ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পতনের ৯ মাস পার হলেও আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর অপরাধবোধ বা অনুশোচনা নাই। উপরন্তু তারা সীমান্তের ওপর থেকে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নাই।
বছরের পর বছর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দমন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবি মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছে সর্বাগ্রে। এজন্য আইন সংশোধনের কথাও বিএনপি বলেছে। কিন্তু আইনে মানবতাবিরোধী কাজের জন্য রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের বিচারের বিধান প্রস্তাব থাকলেও উপদেষ্টা পরিষদ কেন সেই বিধান বাদ দিয়েছে, জনগণ তা জানতে চায়। আজকে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে যারা আন্দোলন করছেন, সেই এনসিপির প্রধান তখন উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন, ছাত্র প্রতিনিধিরা এখনও উপদেষ্টা পরিষদে আছেন, তারা এর দায় এড়াতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হলে জনগণই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিত।
শাহবাগে যারা আন্দোলন করছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণও দৃশ্যত তাদের হাতে। এর জবাব তাদেরকেই দিতে হবে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রেসিডেন্ট, হত্যা মামলার আসামি কিভাবে বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল এবং ফ্যাসিবাদের বিচার, সংস্কার, নির্বাচন দৃশ্যমান না হওয়ার দায় অন্তর্বর্তী সরকার ও এনসিপি এড়াতে পারে না।’
তিনি পাড়া-মহল্লায়, অলিতেগলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ছাত্র, গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামতে হবে। সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে গণ-অভুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
হালুয়াঘাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমজাদ আলী , পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর আলম বিপ্লব, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান স্বাধীন, আনোয়ার হোসেন, তাজিকুল ইসলাম, মনির হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রুহুল আমিন খান, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবদুল গনি, সাধারণ সম্পাদক মশিউজ্জামান, পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব তাজবির হোসেন অন্তর বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আজ দুপুরে হলুয়াঘাট পৌর শহরের মোজাখালীতে কামাক্ষ্যা মাতার মন্দিরে বার্ষিক পূজা পরিদর্শন করেন। কামাক্ষ্যা মন্দিরে উপস্থিত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ এমরান সালেহ প্রিন্সকে স্বাগত জানান।
তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে ঘুরে ঘুরে ভক্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বেগম খালেদা জিয়ার রেইনবো নেশন, তারেক রহমানের ৩১ দফার আলোকে বিএনপি অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
এ সময় হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবতুষ সরকার, কামাক্ষা মাতার মন্দির কমিটির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র দত্ত, হালুয়াঘাট পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য মন্টি সরকার, বিএনপি নেতা উত্তম কুমার সরকার বাবুল, হিন্দু ধর্মীয় নেতা সঞ্জয় সরকার, অঞ্জন সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফপি/এস এন