ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিদেশ ভ্রমণে লাগাম

বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর বিদেশে ব্যবসায়িক শাখা খোলার নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি শাখাগুলোকে লাভজনক করতেও বলা হয়েছে। এজন্য মূল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কর্মীদের অত্যাবশ্যক না হলে ব্যাংকের টাকায় বিদেশে বিলাসী ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নতুন নীতিমালায়। প্রতি দুই বছর পরপর বিদেশি শাখায় নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলারের মাধ্যমে নীতিমালাটি জারি করা হয়। একইদিন এটি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে জানানো হয়েছে। বিদেশে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণ বলতে, বিদেশি শাখা, প্রতিনিধি অফিস ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি (এক্সচেঞ্জ হাউজ, ফাইন্যান্স কোম্পানি) স্থাপন এবং বিদেশি ব্যাংক বা ব্যাংক ব্যবসায় নিয়োজিত নয়- এমন কোম্পানির শেয়ার কেনাকে বোঝাবে। এ বিষয়ে আগে কোনো নীতিমালাই ছিল না। শুধু ২০০১ সালের ১৬ জুলাই একটি চিঠির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। এর আলোকে দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশে শাখা স্থাপন করে ব্যবসা করে আসছিল। ফলে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য এসব শাখা খোলা হলেও এর বিপরীতে জমজমাট ছিল হুন্ডি ব্যবসা। এছাড়া এসব শাখার মাধ্যমে টাকা পাচারও হতো। যে কারণে বিদেশে খোলা শাখা বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর বেশির ভাগই এখন লোকসানি। নতুন নীতিমালায় এসব অনিয়ম বন্ধ করতে বিদেশে শাখা বা এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলার নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে।

পাশাপাশি এগুলোকে লাভজনক করতেও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া নীতিমালা না থাকায় বিদেশি শাখার অর্থে ব্যাংকের মূল পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের লোকজন বিদেশে বিলাসী ভমণ করত। এসব কারণে ওই শাখা লোকসানি হয়ে পড়ে। এখনো বিদেশি বেশির ভাগ দেশি ব্যাংকের শাখা লোকসানি।

নীতিমালায় বলা হয়, বিদেশে শাখা বা প্রতিনিধি অফিস ও সাবসিডিয়ারি (এক্সচেঞ্জ হাউজ, ফাইন্যান্স কোম্পানি ইত্যাদি) স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবসার ন্যূনতম ৭ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন খাতে থাকতে হবে সন্তোষজনক রেটিং, মূলধন ভিত্তি হতে হবে শক্তিশালী। তালিকাভুক্ত হতে হবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে। ওই ব্যাংকের শেয়ারের মান হতে হবে এ ক্যাটাগরির। যে দেশে ব্যাংকের শাখা, প্রতিনিধি অফিস, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্থাপন করা হবে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকতে হবে। এসব সম্পর্ক না থাকলে শাখা খোলা যাবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগ এবং তাদের অর্জিত অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের বিদ্যমান নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য অনুক‚ল হতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমোদন নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কোনো দেশে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ইতোমধ্যে অন্য কোনো বাংলাদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বিদ্যমান থাকলে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা স্থাপনের যৌক্তিকতা উপযুক্ত তথ্যাদি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রয়োজনীয় লোকবলের সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ দিতে হবে বাংলাদেশি নাগরিক। প্রতি দুই বছর পরপর বিদেশি শাখা নিরীক্ষা করতে হবে। পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশে প্রস্তাবিত শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির বাড়াতে হবে নিট মুনাফা।

এ লক্ষ্যে ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অত্যাবশ্যকীয় না হলে সেদেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকবে। দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিদেশে ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে ব্যাংকের শাখা বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অর্জিত নিট মুনাফা প্রতিবছর শেষে দেশে আনতে হবে।

বিদেশি শাখা, প্রতিনিধি অফিস ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অবসায়ন বা ব্যবসা বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদ বিক্রি করা অর্থ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে।

দেশি ব্যাংকগুলো বিদেশে ব্যাংকের শাখা বা ব্যাংক ব্যবসার বাইরে অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশ নিতে হবে। কেনার আগে ওই কোম্পানির রেটিং ও তিন বছরের ব্যবসার অবস্থা দেখে নিতে হবে। লাভজনক হলেই কেবল তা কেনা যাবে।

আরআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কটু কথার জবাবে নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ: পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় Dec 21, 2025
img
রিকশাচালকের করা মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি কারাগারে Dec 21, 2025
img
ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্রকে হত্যার ঘটনায় মাদারীপুরে প্রতিবাদ মিছিল Dec 21, 2025
img
ইনকিলাব মঞ্চের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Dec 21, 2025
img
সুদানে মার্কেটে ড্রোন হামলায় নিহত ১০ Dec 21, 2025
img
মাইলি সাইরাস পেলেন বিশেষ সম্মাননা Dec 21, 2025
img
ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচিত হয়ে গেছে : পীর চরমোনাই Dec 21, 2025
img
কারাগারে বসে মনোনয়নপত্র নিলেন সাবেক এমপি Dec 21, 2025
img
তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি Dec 21, 2025
img
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে বিএনপি : প্রিন্স Dec 21, 2025
img
প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ, তবু রাজস্বে ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি Dec 21, 2025
img
২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পোস্টাল ভোটিং অ্যাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে Dec 21, 2025
img
আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ Dec 21, 2025
img
কে করবেন রাজশাহীর উইকেটকিপিং? মুশফিক নাকি আকবর? Dec 21, 2025
img
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চুরি প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার সামগ্রী , আটক ৩ Dec 21, 2025
img
হাদি হত্যা: প্রধান আসামি ফয়সালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা Dec 21, 2025
img
নির্বাচন বানচাল করতেই ওসমান হাদিকে হত্যা: জুনায়েদ সাকি Dec 21, 2025
img
লালমনিরহাটে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যকে ফেরত দিল বিজিবি Dec 21, 2025
img
শ্রীলঙ্কায় ভূমিধস নিয়ে সতর্কবার্তা, বাংলাদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ Dec 21, 2025
img
ভক্তদের সঙ্গে নিজের জীবন দর্শন ভাগ করলেন ইশা সাহা Dec 21, 2025