নিয়মিত ঘুমের সমস্যা, বুকে চাপ, মাথাব্যথা কিংবা অকারণে আতঙ্কে ঘেমে যাওয়ার মতো উপসর্গ এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রায়ই বলা হয়—শরীরে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু উপসর্গগুলো থেকেই যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলোর মূল কারণ হতে পারে উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এই উদ্বেগ থেকে প্যানিক অ্যাটাক, সামাজিক ভীতি বা অন্যান্য মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের মানসিক চাপ কমাতে ওষুধ ছাড়াও একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রিলাক্সেশন থেরাপি। এতে কিছু নির্দিষ্ট অনুশীলনের মাধ্যমে শরীর ও মনকে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রিলাক্সেশন অনুশীলনে উদ্বেগ কমে, ঘুমের মান উন্নত হয় এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
রিলাক্সেশন থেরাপির চারটি কার্যকর পদ্ধতি:
১. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing Exercise):
ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশান্ত করা যায়। এতে শরীরে প্যারাসিম্প্যাথেটিক কার্যক্রম সক্রিয় হয়, যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। এই অনুশীলনে পেটে হাত রেখে শ্বাসের গতি ও অনুভূতির ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়।
২. বডি স্ক্যান:
চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অংশে মনোযোগ দেওয়া হয়—পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত। কোথাও ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলেও তা বিচার না করে শুধু অনুভব করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা শরীর ও মনের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি করে।
৩. মাইন্ডফুলনেস:
বর্তমান মুহূর্তে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার কৌশল হলো মাইন্ডফুলনেস। যেমন—চা খাওয়ার সময় শুধু চায়ের স্বাদ, গন্ধ ও উষ্ণতা অনুভব করা বা হাঁটার সময় পায়ের ধ্বনি ও আশপাশের পরিবেশ টের পাওয়া। এই সচেতন উপস্থিতি মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
৪. প্রোগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সেশন (PMR):
এই অনুশীলনে ধাপে ধাপে শরীরের বিভিন্ন পেশি কিছুক্ষণ শক্ত করে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে পেশির টান কমে এবং শরীর আবার স্বাভাবিকভাবে শিথিল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট করে এই অনুশীলনগুলো করা হলে উদ্বেগজনিত উপসর্গ অনেকটাই কমে আসতে পারে। প্যানিক অ্যাটাকের সময়েও তাৎক্ষণিক প্রশান্তি পেতে সাহায্য করে এসব পদ্ধতি।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অনেক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এসব থেরাপির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপে ভোগার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রিলাক্সেশন থেরাপির চাহিদাও বাড়ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিত রিলাক্সেশন অনুশীলন মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি আনার একটি স্বাভাবিক এবং কার্যকর উপায়। শুধু ওষুধ নয়, নিজের সচেতন চর্চার মাধ্যমেও মানসিক স্বাস্থ্যে বড় পরিবর্তন সম্ভব—এ ধারণা এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।
এসএস