যশোরের বেনাপোলে ২০২২ সালে নির্মিত ওজন স্কেলটি এখনো চালু হয়নি। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন পক্ষের বাধার কারণে স্কেলটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, ট্রাকমালিক সমিতি, সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বিরোধিতার কারণেই কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এদিকে স্কেল চালু না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ সরকারকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লোড ওজন করতে স্কেলের গণ্ডিতে সিরিয়ালে ঢুকছে একের পর এক পণ্যবাহী ট্রাক। আইন অনুযায়ী যে ট্রাকে ওভারলোড নেই সেটি ওজন শেষে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর ওভারলোডবাহী ট্রাকে অটোমেটিক সিস্টেমে জরিমানা হয়ে স্লিপ বের হচ্ছে। তবে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে মহাসড়ক ধরে দিব্বি চলে যাচ্ছে ওভারলোডেড ট্রাকগুলো।
কথা হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আনসার সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সরকার এখানে আমাকে ডিউটি দিয়েছে। ডিউটি করছি। তবে যে কারণে ডিউটি করছি তার কোনো ফল নেই। বিনা কারণে আমরা প্রতিদিন কষ্ট করছি। স্কেল পয়েন্টে দায়িত্বরত অপর এক স্টাফ বলেন, ট্রাক আসছে ওজন করছি। ওভারলোডের ট্রাকে জরিমানার স্লিপ বের হচ্ছে। তবে তা না নিয়েই একপ্রকার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলে যাচ্ছে। কঠোর হলে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন এসে হট্টগোল করে।
বেনাপোল ওজন স্কেলের ইজারাদার ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের অ্যাডমিন মহিদুল ইসলাম বলেন, স্কেলের কার্যক্রম চালু করতে আমরা এখানে এসেছি। তবে একদিনও জরিমানা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এখানে মোট ৪২ জন স্টাফ শিফট অনুযায়ী কাজ করেন। আনসার সদস্য রয়েছেন ৭ জন। বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটর খরচসহ প্রতিমাসে তাদের বেতন-ভাতা প্রায় ১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, স্কেলটি চালু করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোর নতুন করে উদ্যােগ গ্রহন করেছে। আশা করছি এবার সমস্যার সমাধান হবে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু বলেন, আমার মনে হয় ওজন স্কেলটি চালু হোক সেটি যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ চায় না। যদি চাইতো তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। আমরাও চাই ওজন স্কেলটি চালু হোক। সরকার লাভবান হোক।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি একেএম আতিকুজ্জামান সনি। তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে তিনটি পোর্টে (ভোমরা, নওয়াপাড়া ও বেনাপোল) ওজন স্কেল চালু করার কথা বলেছি।
শুধুমাত্র বেনাপোলে স্কেল চালু হলে এ বন্দরে ব্যবসায়ে ধস নামবে। ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে চলে যাবে। আমরা বৈষম্য চাই না। যে কারণে আপাতত এই ওজন স্কেল চালু করার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি।
নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান বলেন, ট্রাকে লোড কম দেখিয়ে আলাদাভাবে হাইওয়ে পুলিশকে দেখাতে সিএন্ডএফ থেকে লোডের স্লিপ সরবরাহকরা হয়। যে কারণে ওভারলোড দেখেও প্রমাণ করতে না পারায় আমরা মামলা দিতে পারছি না। এতে রোডের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অতিদ্রুত বেনাপোলের ওজন স্কেলটি চালু করার দাবি এই কর্মকর্তার।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওজন স্কেলটি চালুর ব্যাপারে যশোর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ট্রাকমালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে দ্রুত স্কেলটি চালু করা হবে।
আরএ/টিএ