জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলেও এর সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি বলে মনে করেন লেখক ও চিন্তাবিদ এস এম রেজাউল করিম (রক মনু)।
তিনি বলেন, “বাকি কাজ আমাদেরই করতে হবে।” তার মতে, জুলাইয়ের গণজাগরণকে একটি রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো অসম্পূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আধুনিক রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার (২১ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুনির চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ইউনাইটেড পিপলস্ বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও আগামী দিনের রাজনৈতিক রূপরেখা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বক্তারা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উদ্ভূত অভ্যুত্থানসদৃশ গণজাগরণ ও এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেন। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এস এম রেজাউল করিম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান ছিল নতুন এক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সূচনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সে অভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত বার্তা, রাজনৈতিক দাবি ও ঐতিহাসিক শক্তিকে আমরা কাঠামোগতভাবে রূপ দিতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “জুলাই পরবর্তী সময়ে যে সংহতি, সংগঠন ও দিকনির্দেশনা তৈরি হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি বলেই রাষ্ট্র এখন আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন একটি সুসংহত, ঐক্যভিত্তিক ঘোষণাপত্র, যা হবে ভবিষ্যতের রূপরেখা।”
তিনি এটিকে “অসমাপ্ত রাজনৈতিক বিপ্লব” আখ্যা দিয়ে বলেন, “ঘটনা হিসেবে জুলাই শেষ, কিন্তু প্রক্রিয়া হিসেবে এটি চলমান। আমরা যদি এর রাজনৈতিক ভিত্তি নির্ধারণ না করি, তবে তা কেবল আবেগ বা সামাজিক মিডিয়া আলোচনায় সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এর পরিবর্তে, আমাদের দরকার বাস্তববাদী, দলগতভাবে গ্রহণযোগ্য ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ডকুমেন্ট।”
আলোচনা সভায় আপ বাংলাদেশ-এর প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত বলেন, “জুলাই প্রলম্বিত রাজনৈতিক সংকটের বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ ছিল। এখন সময় এসেছে সেই প্রতিবাদকে একটি বাস্তব কাঠামোতে রূপান্তর করার। এজন্য বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র আমাদের নতুন রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তি হতে পারে। এটি কেবল সরকারের সমালোচনা নয়— এটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন।”
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য দ্বীন ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, আবরার হামীম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের সংগঠকরা। তারা ঘোষণাপত্র বিষয়ে স্ব স্ব মতামত তুলে ধরেন এবং এটিকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলার আহ্বান জানান।
সভা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে প্রশ্নোত্তর, মতবিনিময় ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে।
আরএ/টিএ