ওয়ানডে ক্রিকেট এখন আর ৪০০ রানের গণ্ডিতে আটকে নেই। অনেক আগেই সেই সীমানা পেরিয়ে ৫০০–এর দোরগোড়ায় চলে গেছে দলগুলো। যেখানে শীর্ষ তিনটি স্কোরই ইংল্যান্ডের দখলে। ফলে তাদের জন্য ৪০০ কোনো ইতিহাস নয়, তবুও গতকাল (বৃহস্পতিবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের ৪০০ রান গড়ার পথে ইতিহাসই হলো। কারণ তাদের কোনো ব্যাটারই সেঞ্চুরি পাননি। বিপরীতে এমন রানপাহাড়ের সামনে রীতিমতো খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এদিন ক্যারিবীয়দের হারের পথে অনেক কারণ থাকতে পারে। তার একটি কারণ অবশ্য নিজেদের বার্বাডোজ দ্বীপেরই ছেলে জ্যাক বেথেল। পরে অবশ্য ইংল্যান্ডের বার্মিংহামকেই তিনি নতুন ঠিকানা বানিয়েছেন। ঘরের মাঠে খেলতে নেমে উইন্ডিজদের ওপর ঝড় তোলেন এই ২১ বছর বয়সী ব্যাটার। তার ৫৩ বলে ৮২ রানের ঝোড়ো ইনিংসের পাশাপাশি বেন ডাকেট ৬০, হ্যারি ব্রুক ৫৮ ও জো রুট ৫৭ রান করলে নির্ধারিত ওভারে ইংলিশদের পুঁজি দাঁড়ায় বরাবর ৪০০ রান। লক্ষ্য তাড়ায় উইন্ডিজরা মাত্র ১৬২ রানে গুটিয়ে গেছে।
ম্যাচটিতে ইংলিশরা ইতিহাস গড়েছে প্রথম দল হিসেবে কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়াই ৪০০ রান তুলে। এদিনই সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হিসেবে হ্যারি ব্রুকের অভিষেক হয়। ম্যাচটিতে ব্যক্তিগত বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনিও। ওয়ানডে ম্যাচে কোনো আউটফিল্ড ফিল্ডার হিসেবে সর্বোচ্চ ৫টি ক্যাচ ধরেছেন এই তারকা। যা ইংল্যান্ডের হয়ে যেকোনো ফিল্ডার হিসেবে সর্বোচ্চ। অবশ্য এই বিশ্বরেকর্ডে ব্রুক একা নন। ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে রেকর্ডটি গড়েছিলেন সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের একজন ও দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি জন্টি রোডস।
এরপর দলগতভাবেও ব্রুক পেয়েছেন বল-ব্যাটের দারুণ পারফরম্যান্সে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৩৮ রান) ব্যবধানে ওয়ানডে জয়। ফরম্যাটটিতে অষ্ট্রেলিয়াকে সর্বোচ্চ ২৪২ রানে হারিয়েছিল ইংলিশরা। ২০১৮ সালে ইংলিশদের সেই ঐতিহাসিক জয় এসেছিল ৪৮১ রান তোলার পর। যেখানে তাদের দুই ব্যাটারই প্রায় দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন। আর অজিদের দৌড় থামে ২৩৯ রানে।
এদিকে, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে সফরকারী উইন্ডিজদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায় স্বাগতিকরা। প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে জেমি স্মিথ ও ডাকেটের সঙ্গে ৬৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। স্মিথ ফেরেন ২৪ বলে ৩৭ রান করে। তবে পাওয়ার প্লের ১০ ওভারেই ইংল্যান্ডের স্কোরশিটে ওঠে ১ উইকেটে ৯০ রান। পরের দুটি উইকেটেও পঞ্চাশোর্ধ জুটি আসে। ৩৪ বলে ফিফটি করা ডাকেটের ইনিংস (৪৮ বলে ৬ চার ও এক ছক্কা) থামে ৬০ রানে। তিনে নেমে রুট ফিফটি করেন ৬০ বলে। আউট হন ৫৭ রানে।
শুরুতে ধীরগতির হলেও ৪১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন অধিনায়ক ব্রুক। ৪৫ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ৫৮। সাবেক অধিনায়ক জস বাটলার ৩২ বলে ৩৭ রান করার পরই আসে ম্যাচের সেরা ইনিংস। বেথেল ও উইল জ্যাকস মিলে ৪৪ বলে ৯৮ রানের বিস্ফোরক জুটি গড়েন। জ্যাকস ৩৯ এবং বেথেল ওয়ানডেসেরা ইনিংস নিয়ে যান ৮২-তে। উইন্ডিজদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জেইডেন সিলস। যদিও ছিলেন বেশ খরুচে।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১০০ রানের আগেই তারা ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। একপর্যায়ে ১২৪ রানে ৯ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের রেকর্ড (২৫৭ রান)। তবে সেই শঙ্কা পার করেছেন আলজারি জোসেফ ও সিলস মিলে। তারা ৩৮ রানের শেষ উইকেট জুটিতে দলীয় স্কোর দেড়শ পেরোন। ক্যারিবীয়দের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে একাদশ ব্যাটার সিলসের ব্যাটে। ইংলিশদের পক্ষে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব মাহমুদ ও জেমি ওভারটন।
আরআর/টিএ