দুই দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হতে শুরু করেছে বরিশালের পশুর হাট। ট্রলার, ট্রাক বা পায়ে হাঁটিয়ে একের পর এক পশু এনে বাঁধা হচ্ছে হাটে। শুধু এই অঞ্চলেরই নয় খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আনছেন পশু। বিকেল হলেই দলে দলে ক্রেতা-বিক্রেতা আসছেন হাটে। পশু দেখে পছন্দ হলে দরদামের বচসায় মেতে উঠছেন।
বরিশালে পশুর হাটগুলোতে এখন এমন চিত্র স্বাভাবিক। বিক্রেতারা বলছেন, হাট জমলেও বিক্রি জমে ওঠেনি। ক্রেতারা এখনো পশু পছন্দের জন্য এক হাট থেকে আরেক হাটে ছুটছেন। প্রতিটি বাজারে পশুর উচ্চমূল্য চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বুধবার (৪ জুন) বরিশালের চরমোনাই, নবগ্রাম, রূপাতলী, কালিজিরা, কাগাশুরা ও বাঘিয়া এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসানো ছোটবড় সাতটি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নগরীর রূপাতলী পশুর হাটের ক্রেতা আব্দুল হামিদ বলেন, বড় সাইজের গরু বাজারে খুব বেশি ওঠেনি। দেশীয় প্রজাতির আর ছোট ছোট খামারের গরু এসেছে। আমি কয়েকটি হাট ঘুরেছি। গরুর পাইকাররা খুব বেশি দাম চাইছে।
তার কথায় যোগ দিয়ে বেল্লাল মুন্সী বলেন, গত বছর আমি যে গরু কিনেছিলাম এক লাখ ১০ হাজার টাকায় একই সাইজের গরু এবার দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এক লাখ ৭০ হাজারে ছাড়বে। বছরের ব্যবধানে ৬০ হাজার টাকা বেড়ে গেলে গরু কিনবো কীভাবে?
একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেল কাগাশুরা বাজারে। বিক্রেতা মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত বছর ভুসি, খৈল আর খড়ের যে দাম ছিল এবার তার থেকে অনেক বেশি। একটা গরু পুষতে কী পরিমান খরচ হয় তা এ বছর টের পেয়েছি। সব জিনিসের দাম। আমি নিজেও স্বীকার করি গত বছর যে গরু ৭০থেকে ৮০ হাজারে বিক্রি হয়েছে এবার সেই গরুই দাম তুলতে হচ্ছে এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। আগের বারের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুও চাওয়া লাগছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়।
চরমোনাই হাটের ক্রেতা মুশফিকুর রহমান জানান, গরুর বেপারীরা বরিশালের হাটগুলোতে নানা অজুহাতে ক্ষণে ক্ষণে পশুর দাম বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের আরও নজরদারি বাড়ানো হলে এমন অস্বস্তি তৈরি হতো না। আকারের সাথে দামের সামঞ্জস্য নেই।
বানারীপাড়ার গুয়াচিত্রার হাটের পাইকারী বিক্রেতা রমিজ উদ্দিন বলেন, সোমবার ১২টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। বুধবার পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা এখনো কেনা শুরু করেননি। তারা হাট ঘুরে দেখছেন। আশা করছি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যে সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে যাবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেন, পশুর হাটে ক্রেতা হয়রানির শিকার যেন না হন এজন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া হাটগুলোকে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ নির্বিঘ্ন করতে পশুর হাট এবং সড়কে ভ্রাম্যমান আদালত দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তায় সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বরিশালে নগরীতে তিনটিসহ জেলার ১০ উপজেলায় এ বছরে ৬৩টি কোরবানির পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এমআর