ইতালিতে নাগরিকত্ব আইন সহজ ও শ্রমিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত গণভোটে ভোটার উপস্থিতির ঘাটতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এটি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি তার সমর্থকদের গণভোটে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
দুই দিনব্যাপী গণভোট বৈধ হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ভোটারদের অন্তত ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণ। কিন্তু সোমবার ভোটগ্রহণ শেষে দেখা যায়, মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার এতে অংশ নিয়েছেন।
এই গণভোটটি একটি তৃণমূল প্রচারণার মাধ্যমে শুরু হয় এবং এতে সমর্থন দেয় মধ্য বামপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডি)। প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে ইতালির সঙ্গে কোনো বৈবাহিক বা রক্তের সম্পর্কহীন একজন অইইউ প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী বর্তমানে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যে ১০ বছর বসবাসের শর্ত রয়েছে, তা কমিয়ে পাঁচ বছরে আনার পরিকল্পনা ছিল। এ ছাড়া নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়াও বর্তমানে দীর্ঘ সময় নেয়।
এই পরিবর্তন কার্যকর হলে জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অবস্থানে আসত ইতালি।
তবে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি এ প্রস্তাবের ‘সম্পূর্ণরূপে বিরোধী’। তার জোটের অনেক নেতাও ভোটারদের গণভোটে অংশ না নিতে বলেন, যাতে প্রয়োজনীয় কোরাম না হয়। মেলোনির ডানপন্থী দল ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’ অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
এই গণভোটে একটি প্রশ্ন ছিল নাগরিকত্ববিষয়ক, বাকি চারটি ছিল শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে, যেমন ছাঁটাই, অনিশ্চিত কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা বৃদ্ধির প্রস্তাব।
ইতালির বৃহত্তম শ্রমিক ইউনিয়ন সিজিআইএলের মহাসচিব মরিসিও লানদিনি ভোটারদের কম উপস্থিতিকে ‘একটি স্পষ্ট গণতান্ত্রিক সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
নতুন নেতৃত্বের অধীনে থাকা ডেমোক্রেটিক পার্টি এই গণভোটের মাধ্যমে শ্রমজীবী জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছিল। দলটি বর্তমানে মেলোনির ডানপন্থী দলের তুলনায় জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঘনিষ্ঠ সহকারী জিওভানবাতিস্তা ফাজ্জোলারি বলেন, ‘বামপন্থীরা এই গণভোটকে মেলোনি সরকারবিরোধী গণভোটে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ফলাফল খুবই স্পষ্ট : সরকার আরো শক্তিশালী হয়েছে, আর বামপন্থীরা আরো দুর্বল।’
তবে এই গণভোট পাস হলেও ইতালির বিতর্কিত অভিবাসন আইনটির কোনো পরিবর্তন হতো না, যার ফলে এখনো বিদেশি মা-বাবার ইতালিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ নেই।
আরএম