যুদ্ধে জড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি! ইরানকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের

সম্প্রতি ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলায় এই হামলা চালানো হয়েছে।

তবে এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে এক গুরুতর সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘাতের পরিণতি শুধু ইসরাইল-ইরান নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের জন্যই মারাত্মক হতে পারে।

ইসরাইলের এই আচমকা হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্ট মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ৪০,০০০ সেনা, কূটনীতিক ও নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইল এই হামলার ব্যাপারে তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেও পূর্ব সতর্কতা দেয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন সরাসরি ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক উত্তপ্ত। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি আবারও ফিরে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অজুহাতে হামলা চালানো হলেও, তা কখনও প্রমাণিত হয়নি। ফলাফলস্বরূপ, ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান এবং দীর্ঘমেয়াদী মানবিক সংকট দেখা দেয়। ঠিক একই চিত্র এবারও আশঙ্কিত।

ইরান বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক শক্তি। আইআরজিসি (Islamic Revolutionary Guard Corps) এবং আধাসামরিক বাহিনী 'বাসিজ'-এর সদস্য সংখ্যা মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি। দেশের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি ও দুর্গম হওয়ায়, কেবল বিমান হামলা চালিয়ে সাফল্য অর্জন অসম্ভব বলেই সামরিক বিশেষজ্ঞদের মত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ধ্বংস করা নয়; বরং রাজনৈতিকভাবে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেই বলেছেন, এটি ইরানের 'রেজিম চেঞ্জ'-এর সূচনা হতে পারে। তবে ইরানের রাজনীতি একটি শক্তিশালী ধর্মীয় ও সামরিক অভিজাত গোষ্ঠীর হাতে থাকায়, এই পরিবর্তন কার্যকর করা সহজ নয়।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশরসহ অনেক দেশ পারমাণবিক সমরাস্ত্র অর্জনের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করবে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাও প্রবল। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে ৮ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ হলে এই ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে।ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ সতর্ক করে বলেছেন, নতুন যুদ্ধ একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিতে পারে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেছেন, বলপ্রয়োগে সরকার পতনের চেষ্টা একটি “কৌশলগত ভুল” হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেহেতু তার প্রথম মেয়াদে নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি, এই সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখা তার জন্য কূটনৈতিক সাফল্য হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ কোনোমতেই সমাধান হতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আগ্রাসন কখনোই শান্তি আনতে পারেনি। বরং যুদ্ধ ডেকে এনেছে মৃত্যু, ধ্বংস ও অগণন মানবিক বিপর্যয়। এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করা।

পৃথিবীর মানুষের কল্যাণে যুদ্ধ নয়, শান্তির পথেই হাঁটতে হবে।

আরএম  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সামলেছিল ছাত্রশিবির মেডিকেল জোন : ডাকসু ভিপি Nov 14, 2025
img
আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে সরকারের ২৮ কোটি টাকার অনুমোদন Nov 14, 2025
img
আগামীর গণভোট কেমন হবে, জুলাইয়ের বিজয়ীরা নির্ধারণ করবে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 14, 2025
img

আমীর খসরু

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি Nov 14, 2025
img
নাশকতার অভিযোগে কুড়িগ্রাম পুলিশের হাতে আকট ৫১ Nov 14, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের আশ্বাসে খেলতে রাজি হলো শ্রীলঙ্কা Nov 14, 2025
img
আপনারা সংখ্যালঘু না, কেউ আপনাদের সম্পত্তি দখল করতে পারবে না : মান্নান Nov 14, 2025
img
বিএনপি ও জামায়াতের কথামতো হয়েছে সনদ: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 14, 2025
img
বারবার ধোকা দিয়ে দেশকে সুন্দর করা যাবে না : রেজাউল করীম Nov 14, 2025
img
বাংলাদেশে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাকিস্তান Nov 14, 2025
img
শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন: জয়নুল আবদিন Nov 14, 2025
img
যুবদল নেতার হামলায় আহত ৩ পুলিশ Nov 14, 2025
img
শাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে আ. লীগের ককটেল ফ্যাক্টরির সন্ধান, অভিযান পুলিশের Nov 14, 2025
img
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে ‘জবরদস্তিমূলক হস্তক্ষেপ’ নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 14, 2025
img
১০০তম টেস্টের পরও খেলা চালিয়ে যাবেন মুশফিক, আশা করেন শান্ত Nov 14, 2025
img
দীঘির উদ্দেশ্যে চিঠি লিখলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী Nov 14, 2025
img
মিস ইন্টারন্যাশনালে বাংলাদেশের জেসিয়া ইসলাম Nov 14, 2025
img
ছেলে হত্যার ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক Nov 14, 2025
img
বাংলাদেশকে ৮-০ গোলে হারল পাকিস্তান Nov 14, 2025