মাসিক ভাতার পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন জুলাই যোদ্ধারা

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন। মাসিক ভাতার পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ‘আহত যোদ্ধারা’ আজীবন সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গতকাল সোমবার বাসসকে এসব তথ্য জানান।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’— এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে— অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে।

তা ছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে।

তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেওয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবনযাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে, যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন।

তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতিমধ্যে পেয়েছেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতিমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

‘ক্যাটাগরি-বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন- যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে তারা একা মোটামুটি চলতে-ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তাঁরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তা ছাড়া এই ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন।

চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ ছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় দিবস হিসেবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে।

তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তা-ও অতিদ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যেসব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে তারও সমাধান করা হচ্ছে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পদ ফিরে ফেলেন বিএনপির ১০ নেতা Nov 22, 2025
img
বিগত ৪ টি নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারেনি : সেলিমুজ্জামান সেলিম Nov 22, 2025
img
আ.লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে দিনের ভোট রাতে করেছে : মঈন খান Nov 22, 2025
img
বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক চাইলে, অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠাতে হবে : নাহিদ ইসলাম Nov 22, 2025
খুলনায় গেলে প্রাণঝুঁকি! চমক দেওয়া অভিযোগ Nov 22, 2025
স্বামী বিদেশ লাইফ টা কেমন ইনজয় করছেন! Nov 22, 2025
img
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে টেলিকম পলিসি রিভিউ করা হবে : আমীর খসরু Nov 22, 2025
আমিরের উপস্থিতিতে রিনা দত্তের খুশির মুহূর্ত Nov 22, 2025
শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে ব্রাজিল Nov 22, 2025
প্রবাসী ভোটারদের প্রক্রিয়া নিয়ে যা বললেন সিইসি Nov 22, 2025
মৃত ভোটার ইস্যুতে যা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার Nov 22, 2025
গাজীপুর-১ আসনে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশী ভিপি হেলাল Nov 22, 2025
ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করলে শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে: জামায়াত আমীর Nov 22, 2025
img
জাহেলি যুগ আর ফিরে আসবে না : ধর্ম উপদেষ্টা Nov 22, 2025
img
ভূমিকম্পে আতঙ্কে ঢাবির হল থেকে দৌড়ে নামতে গিয়ে আহত ৩ ছাত্রী Nov 22, 2025
img
ওদের বোলিং খারাপ না, আমরা ভালো ব্যাটিং করেছি: আশরাফুল Nov 22, 2025
img
ভূমিকম্পের মেইন শক এখনো আসেনি! Nov 22, 2025
img
ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স Nov 22, 2025
img
জাপার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে: নাহিদ ইসলাম Nov 22, 2025
img
জামায়াতের বিজয় চাই না, জনগণের বিজয় চাই : আমির Nov 22, 2025