মধ্য ভূমধ্যসাগরে বুধ ও বৃহস্পতিবার কয়েকটি আলাদা অভিযানে মোট ১১৭ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমধ্যসাগরে সক্রিয় উদ্ধার জাহাজ ওশান ভাইকিং ও গারগানে-৬ অভিযানগুলো পরিচালনা করে।
মাল্টা উপকূলের এসএআর জোন থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে ৬০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে উদ্ধারে একটি জটিল অভিযান পরিচালনা করে ইতালীয় সংস্থা আরচি পরিচালিত পালতোলা উদ্ধার নৌকা গারগানে-৬। এদের মধ্যে ১২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী ও তিনজন সন্তানসম্ভবা নারী রয়েছেন।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ ছিল।
এই অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে অন্য একটি অভিবাসীদলের বিপদ পড়ার সংবাদ পান নাবিকরা। সেখানে থেকেও আরো ২০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।
তবে এই দুই ঘটনায় ইতালি ও মাল্টা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে ইতালীয় অভিবাসন সংস্থা আরচি।
দুই দেশের কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন ও ই-মেইলে অবহিত করা হয়েছিল।
আরচির বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি দুই দেশের জন্য একটি গুরুতর ব্যর্থতা। স্পষ্টত সমন্বয় ও উদ্ধার কার্যক্রমের অভাব রয়েছে। যা আন্তর্জাতিক উদ্ধার চুক্তি, বিশেষ করে এসএআর কনভেনশন ও সোলাস কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এসব চুক্তি অনুসারে রাষ্ট্রগুলো সময় মতো ও কার্যকর উদ্ধার অভিযান সমন্বয় ও নিশ্চিত করতে বাধ্য। কিন্তু তারা এসব মানছে না।
সংস্থাটির মতে, ২০২৫ সালে এসে এমন ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক আইনে বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার করা বাধ্যতামূলক। এটি না করা একটি অপরাধ।
গারগানে-৬ বর্তমানে ইতালি উপকূলে একমাত্র উদ্ধারকারী দল হিসেবে কাজ করছে। ছোট আকারের এই নৌকাটি অনেক বেশি মানুষের তদারকি করতে সক্ষম নয়। সবশেষ তথ্য অনুসারে, এনজিও লাইফ সাপোর্টের উদ্ধারজাহাজ ইমার্জেন্সি অভিবাসীদের সহায়তায় গারগানে ৬-এর দিকে রওনা দিয়েছে।
এর আগে বুধবার ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলের এসএআর জোন থেকে আরো ৩৭ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে উদ্ধারজাহাজ ওশান ভাইকিং। এদের মধ্যে চারজন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী। তারা প্রায় ১২ ঘণ্টা কোনো প্রকার খাবার ও পানি ছাড়াই সমুদ্রে ভেসেছিল।
ভূমধগ্যসাগরে সক্রিয় নজরদারি বিমান সিবার্ড অভিবাসীদের ভেসে থাকার ব্যাপারে এসওএস মেডিটারানেকে অবহিত করেছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্ধার তৎপরতা না থাকায় অভিবাসী উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর জন্য সমুদ্রে কাজ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। ইউরোপীয় উপকূলরক্ষী সংস্থা (ফ্রন্টেক্স) সাগরে অবস্থান নিলেও তাদের মূল কাজ সীমিত, তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা।
মধ্য ভূমধ্যসাগরের অভিবাসন রুটটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত তিউনিশিয়া ও লিবিয়ায় জড়ো হওয়া ইউরোপমুখী অভিবাসীরা এই পথটি ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভূমধ্যসাগরে দুই হাজার ৪৫২ জন মারা গেছে।
এমআর