নিতেশ তিওয়ারির বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘রামায়ণ’-এ মা সীতা চরিত্রে সাই পল্লবীকে নেওয়ার খবর শোনার পর দর্শকরা যেন আনন্দে মেতে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। সিনেমাপ্রেমীদের একাংশ সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়েছে তীব্র ট্রোলিংয়ে। বলা হচ্ছে, সাই পল্লবী নাকি সীতা চরিত্রের জন্য যথেষ্ট সুন্দর নন। কেউ কেউ তাঁকে সরাসরি সুর্পনখার সঙ্গে তুলনা করেছেন, আবার কেউ বলেছেন তাঁর চেহারা নাকি অত্যন্ত সাধারণ। এই ধরনের ট্রোলিং শুধু কুরুচিকর নয়, বরং প্রশ্ন তোলে সমাজের সৌন্দর্যবোধ নিয়েও।
অথচ অন্যদিকে, রাকুল প্রীত সিং যিনি সুর্পনখার চরিত্রে অভিনয় করছেন, তাকেও নিয়ে উঠেছে ভুল কাস্টিংয়ের অভিযোগ। একদিকে সৌন্দর্যের নামে সাই পল্লবীকে ছোট করা, অন্যদিকে রাকুলের ‘গ্ল্যামার’ নিয়েও বিতর্ক— সব মিলিয়ে রামায়ণ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না।
তবে এই তিক্ততা শুধু ট্রোলিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমর্থকরাও সাই পল্লবীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, সীতা মানেই রূপের প্রতীক নয়, বরং মমতা, নম্রতা, পার্থিবতা আর গভীর মানসিক শক্তির প্রতিচ্ছবি। সাই পল্লবীর সহজ-স্বাভাবিক চেহারা, কসমেটিক সার্জারি বা মেকআপের বাইরে থাকা সৌন্দর্যই তাকে অনন্য করে তোলে। তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই — গার্গী, প্রেমম, শ্যাম সিংহ রায়-এর মতো ছবিতে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি অভিনয়ে কতটা গভীর।
সমালোচকরা বলছেন, সিনেমা কোনো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নয়। রামায়ণ গ্ল্যামারের গল্প নয়, এটা নীতির, সহনশীলতার, ধৈর্যের কাহিনি। সীতা চরিত্রে সাই পল্লবীর মতো অভিনেত্রীকেই মানায়। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সাই পল্লবীর স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানই তাঁকে ট্রোলের নিশানা করেছে। তিনি যে ধর্মীয় চরমপন্থার সমালোচনা করেছিলেন এবং কিছু বিতর্কিত সিনেমার গল্পকেও প্রশ্ন করেছিলেন, সেই কারণেই হয়তো তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।
সবশেষে বলা যায়, এই বিতর্ক আমাদের সমাজের সৌন্দর্যবোধের সংকীর্ণতাই প্রকাশ করছে। কোনো দৃশ্য না দেখে, কোনো সংলাপ না শুনে শুধু রূপের মানদণ্ডে একজন শিল্পীকে খাটো করা নিছক অন্যায় নয়, বরং পশ্চাদপদ মানসিকতার প্রতিফলন। সাই পল্লবীর সীতা চরিত্র হয়তো ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী সীতা হয়ে উঠবে — যা দর্শককে ভাবতে শেখাবে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নতুন করে।
ইউটি/এসএন