শতবর্ষে মাহাথির: “গণতন্ত্র নিখুঁত নয়, বরং বিভক্তির উৎস”

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ১০০ বছরে পা রেখেছেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই বর্ষীয়ান নেতা জন্মদিনের প্রাক্কালে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

সেখানে তিনি বলেন, গণতন্ত্র যেমন কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহাথির গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় প্রখাম করে বলেন, “গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।”

তার মতে, বহুদলীয় গণতন্ত্র বরং দুর্বলতা তৈরি করে।

মাহাথির বলেন, “গণতন্ত্রে শুধু দুইটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে—এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চায়, ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, ফলে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই বহুক্ষেত্রেই গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মাহাথির সরাসরি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ একপ্রকার গণহত্যা, আর যুক্তরাষ্ট্র এর পেছনে থেকে সেটা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

তিনি আরও বলেন, “একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষুধা ও যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র সেই অপরাধীদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, এটা পশ্চিমা সভ্যতার পতনের প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ হয়ে আমরা এখন আবার বর্বরতায় ফিরে গেছি।”

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মাহাথিরের ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র এখন আর মানবাধিকারের কথা বলে না, মানুষের জীবন নিয়েও ভাবে না। বিশ্বে তারা আর নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত নয়।”

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন মাহাথির। পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হন মাত্র ২১ বছর বয়সেই। ১৯৬৪ সালে পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের নেতৃত্বকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান মাহাথিরের

তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন এবং টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন, যেটি দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করে। ৮০ পেরিয়েও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন এবং দুই বছর পর রাজনৈতিক জোট ভেঙে পড়ার কারণে পদত্যাগ করেন।
নিজের শতবর্ষের দীর্ঘ জীবনের পেছনে কী রহস্য আছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, “অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া না করাই ভালো। আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করি, মস্তিষ্কের ব্যায়াম করি— পড়াশোনা করি, লিখি, কথা বলি, বিতর্ক করি, নিজেকে সক্রিয় রাখি।”

তিনি তার স্ত্রী সিতি হাসমাহকে (বয়স ৯৮) সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন।

ভবিষ্যতের মালয়েশিয়া ও মুসলিম বিশ্ব নিয়েও নিজের ভাবনা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মাহাথির মনে করেন, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে, যাতে তারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।”

৯৭ বছর বয়সে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিলেন মাহাথির

মুসলিম বিশ্বের বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুতেও মুসলিম দেশগুলো একমত হতে পারে না। ওআইসি (ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা) সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু কেউ একজন আপত্তি করলেই কিছু করা যায় না। তাই তারা কিছুই করতে পারে না।”

নিজের অর্জন নিয়ে মাহাথির বলেন, “আমি নিজেকে মূল্যায়ন করব না। ইতিহাস বলবে আমি কী করেছি। তবে আমার দেশের জন্য কাজ করাটাই সবচেয়ে তৃপ্তির।”

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইনজুরিতে সাকিব, করাতে হবে অস্ত্রোপচার Sep 15, 2025
img
যেখান থেকে মানুষের উত্থান হয়, ওখানেই পতন হয় : গোলাম মাওলা রনি Sep 15, 2025
img
ভ্যালেন্টাইনস ডেতে আসছে শাহিদ-ত্রিপ্তির ‘ও রোমিও’ Sep 15, 2025
img
লি‌বিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জ‌ন্য দূতাবাসের বার্তা Sep 15, 2025
img
হ্যান্ডশেক না করায় ভারতকে ধুয়ে দিলেন শোয়েব আখতার Sep 15, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে শীর্ষ শিল্প মালিক প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ Sep 15, 2025
img
দাউদকান্দিতে অবৈধ চুন কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন , আটক ৮ Sep 15, 2025
img
১২ তরুণের হাতে ইয়্যুথ অ্যাওয়ার্ড তুলে দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস Sep 15, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলায় মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য শুরু Sep 15, 2025
img
যুবসমাজকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না: প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025
img

এশিয়া কাপ

হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোরে নজর শ্রীলঙ্কার Sep 15, 2025
img
নিউইয়র্কের রাস্তায় রণবীরের হৃদয় ভেঙেছিলেন হলিউডের অভিনেত্রী Sep 15, 2025
img
টিকটক বিক্রি বা বন্ধের সময়সীমা আবারও বাড়াতে পারেন ট্রাম্প Sep 15, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দরে জরিপহীন বালু উত্তোলনের উদ্যোগ Sep 15, 2025
img
প্রথম ঘণ্টায় ২০৯ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন Sep 15, 2025
img
বাগেরহাটে চলছে ঢিলেঢালা হরতাল Sep 15, 2025
img
এবার উজ্জ্বল হলুদ রঙের শাড়িতে মুগ্ধতা ছড়ালেন রোজা Sep 15, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এলেন মাহমুদুর রহমান Sep 15, 2025
img
এমন শিল্পী তো আর যুগে যুগে আসেন না : সাবিনা ইয়াসমিন Sep 15, 2025
img
অভিষেকের ৭ বছর স্মরণে ম্রুণাল ঠাকুরের আবেগঘন বার্তা Sep 15, 2025