পর্দায় এবার প্রেমের গল্পের আড়ালে নয়, সামনে উঠে আসছে এক সামাজিক যুদ্ধ — যেখানে হৃদয়ের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় আত্মসম্মান। সদ্য প্রকাশিত ‘ধড়ক ২’-এর ট্রেলার ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ, এই ছবিটি শুধু একটি প্রেমকাহিনি নয়, বরং ভারতের অন্যতম স্পর্শকাতর সামাজিক সংকট — জাতপাতের বৈষম্য — তা তুলে ধরতে চলেছে প্রকাশ্যভাবে।
‘ধড়ক ২’-এ মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ও ত্রিপ্তি দিমরি। প্রযোজনায় করণ জোহর নিজে। তিনি অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেছেন যে এই ছবি ২০১৮ সালের প্রশংসিত তামিল চলচ্চিত্র ‘পরিয়েরুম পেরুমাল’-এর রিমেক।
মূল ছবিতে পরিয়েরুম ছিলেন এক দলিত যুবক, যার স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়া। কিন্তু সমাজ তাকে শুধুমাত্র তার জাতের কারণে কীভাবে প্রতিদিন অপমান, শোষণ আর সহিংসতার শিকার করেছে — সেটাই ছিল গল্পের আসল কাহিনি। যেখানে বন্ধুত্বকেও প্রেমের দোহাই দিয়ে সমাজ নাকচ করে, আর উচ্চবর্ণের গোঁড়ামি তাকে বারবার কোণঠাসা করতে চায়।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত — যখন পরিয়েরুম জোথি মহালক্ষ্মীর বাবাকে বলেন,
“আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসিনি। আমি শুধু চাই, আমার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাক। আমি চাই সম্মান।”
এই সংলাপই সিনেমাটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
‘ধড়ক ২’-এর প্রথম কিস্তির সঙ্গে পার্থক্য এখানেই —
‘ধড়ক’ ছিল মূলত প্রেমের গল্প, যেখানে জাতপাত ছিল আবহ। কিন্তু ‘ধড়ক ২’-এ জাতপাতই কেন্দ্র। প্রেম সেখানে নেই, আছে আত্মপরিচয়ের লড়াই।
তবে প্রশ্ন থাকছেই — হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, বিশেষত Dharma Productions, কতটা সংবেদনশীল থেকে এই গল্পটিকে তুলে ধরবে? কারণ ‘পরিয়েরুম পেরুমাল’ ছিল তামিল সমাজের বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা এক সিনেমা। হিন্দি ভার্সনে সেই বাস্তবতা কি রয়ে যাবে? নাকি শুধুই এক পালিশ করা সংস্করণ?
সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী বরাবরই বেছে নিয়েছেন লড়াকু, বাস্তবঘন চরিত্র। আর ত্রিপ্তি দিমরি তাঁর সংবেদনশীল চোখ ও আত্মবিশ্বাসী অভিনয়ের জন্য দর্শকের মন জয় করেছেন ইতিমধ্যেই। তাই তাদের যুগলবন্দিতে নতুন কিছু দেখার আশাও তৈরি হয়েছে।
এই সিনেমা শুধুই এক প্রেমের গল্প না হয়ে যদি শ্রেণি ও জাতপাতের সংবেদনশীল রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরতে পারে — তবে ‘ধড়ক ২’ হতে পারে হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এক মাইলফলক।
এসএন